‘এই ক্ষতি পোষানো যাবে না’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর করোনার ক্ষতি পোষানোর আশা করলেও সংঘর্ষের কারণে বিক্রি বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এখন লোকসানের মধ্যেই থাকতে হবে।

নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়
ফাইল ছবি

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় টানা দুই দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা নিউমার্কেট ও চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটসহ ওই এলাকার সব বিপণিবিতান আবার খুলেছে। তবে ঈদ মৌসুমের স্বাভাবিক ভিড়ের ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি গতকাল বৃহস্পতিবার। এতে সেখানকার ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, ঈদের আগে সংঘর্ষ হওয়ায় বেশি ক্ষতি হয়েছে, যা তাঁরা পুষিয়ে নিতে পারবেন না।

সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজের বিপরীত দিকের নূরজাহান সুপার মার্কেটের ৫০টির বেশি দোকানের পণ্য আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি দোকানের ক্যাশ বাক্সের টাকাসহ সব পোশাক পুড়ে ভস্ম হয়েছে। সব হারিয়ে এসব ব্যবসায়ী দিশাহারা।

গত বুধবার মধ্যরাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ‘সহাবস্থান’ বিষয়ে সমঝোতা হয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যেই খুলে যায় চন্দ্রিমা ও নিউমার্কেটের দোকানপাট। আশপাশের বিপণিবিতানগুলোও প্রায় একই সময়ে বেচাকেনা শুরু করে। কিন্তু সব মার্কেটেই ক্রেতার উপস্থিতি ছিল কম। বিশেষ করে নিউমার্কেট ও চন্দ্রিমা মার্কেটে তুলনামূলক অনেক কম ক্রেতা দেখা গেছে।

গত তিন দিনের ধকল কাটতে সময় লাগবে। ভেবেছিলাম করোনার ক্ষতিটা পুষিয়ে যাবে এবার। কিন্তু সেই ক্ষতির মধ্যেই থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
নুরুল আমিন, মালিক, বাঁধন ফ্যাশন, নিউমার্কেট

চন্দ্রিমা মার্কেটের আনিশা ফ্যাশনের মালিক মো. জাফর বলেন, ‘হয়তো ভয়ের কারণে ক্রেতারা এই পাশে আসছেন না। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র তিনটা প্যান্ট বিক্রি হয়েছে। তবে আশা করছি, আগামীকাল (আজ শুক্রবার) বিক্রি বাড়বে।’ অবশ্য এম আর কালেকশনের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, ক্রেতাদের মনে ভয়ভীতি তো আছেই। তারপরও ক্রেতার সংখ্যা আস্তে আস্তে বাড়ছে।

নিউমার্কেটের বাঁধন ফ্যাশনের মালিক নুরুল আমিন বলেন, ‘ঈদ মৌসুমের স্বাভাবিক গতি থাকলে ক্রেতাদের ধাক্কায় আপনি এখানে ঠিকভাবে দাঁড়াতেই পারতেন না। ভেবেছিলাম করোনার ক্ষতিটা পুষিয়ে যাবে এবার। কিন্তু সেই ক্ষতির মধ্যেই থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে।’

নিউমার্কেটের ঢাকা গ্যালারির মালিক আল আমিন বলেন, ‘দুই বছর খাইলো করোনায়। ব্যবসা এবার একেবারেই গেল।’ হিসাবের খাতা দেখিয়ে আল আমিন বলেন, ‘যেদিন গন্ডগোল হইল (সোমবার) সেদিনও ৫২ হাজার টাকার বিক্রি হইছে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) বিকেল পর্যন্ত মাত্র পাঁচ হাজার টাকার মতো বিক্রি হইছে।’

চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি মনজুর আহমেদ জানান, ঈদের মৌসুমে দোকানে দৈনিক গড়ে ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। সেই হিসাবে গত দুই দিনে দুই কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখন ক্রেতা না বাড়লে ক্ষতি আরও বাড়বে।

এদিকে ক্ষতি পোষাতে সীমিত লাভে পণ্য ছেড়ে দেওয়ার কথা জানান কোনো কোনো ব্যবসায়ী। ঢাকা ফ্যাশনের মালিক মো. সোহেল মাতুব্বর বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে অনেক মাল উঠাইছি। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় অল্প লাভে ছেড়ে দিচ্ছি।’

এদিকে ঈদে বেতন–বোনাস পাওয়া নিয়েও উদ্বেগের কথা জানান কেউ কেউ। নিউমার্কেটের দ্বিতীয়তলার একটি প্যান্টের দোকানের বিক্রয়কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা তো দিনমজুরের মতো। দুই দিন বিক্রি বন্ধ ছিল। এর প্রভাব তো বেতন–বোনাসে পড়বেই। প্রত্যেকের পরিবার আছে। ঈদে আমাদের কপালে কী আছে জানি না।’

তৎপর ব্যবসায়ী নেতারা

মার্কেট খোলার পর থেকে নিউমার্কেটে কিছুক্ষণ পরপর মাইকে দোকান মালিক ও বিক্রয়কর্মীদের উদ্দেশে ক্রেতাদের সঙ্গে শোভন আচরণ করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছেন ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া মূল মার্কেটের অভ্যন্তরে চলাচলের রাস্তা আটকে রাখা অস্থায়ী দোকান উচ্ছেদ করতেও দেখা যায় তাঁদের।

নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, ‘ক্রেতাদের নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করার জন্য প্রয়োজনীয় সব উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি। তারপরও কোনো অভিযোগ আসলে সমিতি তা খতিয়ে দেখবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কর্মচারী ও এমনকি দোকান মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নূরজাহান মার্কেটে ১২ কোটি টাকার ক্ষতি

সংঘর্ষের সময়ে ঢাকা কলেজের বিপরীতে নূরজাহান মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। নূরজাহান মার্কেট বণিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. মহসিন বলেন, আগুনে মার্কেটের পাঁচটি দোকানের সব মালামাল পুড়ে যায়। এ ছাড়া আরও ৫০টির বেশি দোকানের পোশাক আংশিক পুড়ে গেছে। সেসব আর বিক্রি করা যাবে না। সব মিলিয়ে আগুনে দোকানিদের ১২ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

তবু অভিযোগ

এদিকে চাঁদনী চক মার্কেটে শাড়ি কিনতে গিয়ে বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করছেন মহাখালীর বাসিন্দা নাহিদা নাফরিন। তাঁর অভিযোগ, শাড়ির দাম জানতে চাইলে বিক্রয়কর্মীরা তাঁকে তা বলেননি। তাঁরা প্রথমে দাম না বলে শাড়ি পছন্দ করতে বলেন। পরে একটা পছন্দ হয়েছে জানালে তার দাম অনেক বেশি চান। তখন সেটা না নিতে চাইলে হেয় করে কথা বলেন তাঁরা।