একই সঙ্গে বিমা ও সঞ্চয় নাম 'ডাক জীবন বীমা'

ডাকঘর সঞ্চয় কর্মসূচির (স্কিম) কথা এত দিন খুব বেশি মানুষ জানতেনই না। এই কর্মসূচির আওতায় সাধারণ হিসাব ও মেয়াদি হিসাবে অল্পবিস্তর মানুষ আমানত রেখে আসছিলেন। সুদের হার ভালোই ছিল। একটিতে ৭ দশমিক ৫, অন্যটিতে ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এটা যে সঞ্চয়পত্র নয়, বরং সঞ্চয় আমানত, সমাজের অনেকে এখনো তা গুলিয়ে ফেলেন। 

কিন্তু দিন ১৫ আগে উভয় হিসাবেই সুদের হার হঠাৎ কমিয়ে অর্ধেক করে সরকার। জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় এ নিয়ে সমালোচনা হয়। যদিও এই ফাঁকে সুদের হার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সব মিলিয়ে এবার অন্তত কর্মসূচিটির কথা কর্মসূচির বাইরে থাকা লোকেরাও জানলেন। বলা যায়, কর্মসূচিটির ভালো একটা বিজ্ঞাপন হয়ে গেল। 

খুব বেশি মানুষের জানা না থাকায় আরেকটি সরকারি উদ্যোগেরও বিজ্ঞাপন দরকার, বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এমনটাই আশা করছেন। এর নাম ‘ডাক জীবন বীমা’—বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি যুগপৎভাবে বিমা পলিসি ও সঞ্চয় প্রকল্প। এটি চালু করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি জনকল্যাণমূলক বিমা প্রকল্প হিসেবে। তবে এটি নিয়ন্ত্রণ, পরিচালন ও বিপণন করে ডাক বিভাগ। 

বাংলাদেশ অঞ্চলে এই পলিসি চালু রয়েছে ১৩৬ বছর ধরে। ১৮৮৪ সালে ডাক বিভাগের রানারদের আর্থিক নিরাপত্তা দিতে পলিসিটি চালু করা হলেও সাধারণ জনগণের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয় ১৯৫৩ সালে। পূর্বাঞ্চল (ঢাকা) ও পশ্চিমাঞ্চল (রংপুর) নামে দুটি অঞ্চলে ভাগ করে ডাক জীবন বীমার কার্যক্রম পরিচালনা করে ডাক বিভাগ। 

কত ধরনের বিমা

ডাক জীবন বীমা পলিসি রয়েছে ছয় ধরনের। আজীবন বিমা, মেয়াদি বিমা, শিক্ষা বিমা, বিবাহ বিমা, যৌথ বিমা ও প্রতিরক্ষা বিমা। পলিসি শুরু হওয়ার দুই বছর পার হওয়ার পর মোট জমা টাকার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণও নেওয়া যায়। প্রিমিয়াম জমা দেওয়া যায় যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে। আবার মেয়াদ শেষে যেকোনো ডাকঘর থেকেই টাকা তোলা যায়। এমনকি চাকরিজীবীদের বেতন থেকে কর্তনের মাধ্যমেও প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যায়। অগ্রিম প্রিমিয়াম দিলে কিছু সুবিধাও পান গ্রাহকেরা। আবার কোনো কারণে বিমা পলিসি বাতিল হয়ে গেলে তা পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগও রয়েছে। 

গ্রাহকদের আরও সুবিধা

দেশের সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি, সামরিক অর্থাৎ যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে গিয়ে ডাক জীবন বীমা পলিসির আওতায় আসতে পারেন। পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই, অর্থাৎ যেকোনো অঙ্কের পলিসি করা যায়। এর তহবিলের সব অর্থ সরকার আপন জিম্মায় রাখে। আজীবন বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বছরে বোনাস পাওয়া যায় প্রতি লাখে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা বোনাস। এ বোনাস কর রেয়াত রয়েছে। 

সুবিধাজনক কিস্তি 

ডাক জীবন বীমার কিস্তি জমা দেওয়া যায় মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে। নগদে যেমন দেওয়া যায়, মাসিক বেতন থেকে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিমাকারীর বয়স ও পলিসির মেয়াদ ভেদে কিস্তির হার ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন আজীবন বিমার ক্ষেত্রে ১৯ থেকে ৫৫ বছর বয়সের গ্রাহকেরা বিমা পলিসি গ্রহণ করতে পারবেন। আর বিমার পূর্ণতা পাবে ৫০, ৫৫, ৬০ ও ৭০ বছর মেয়াদে। মেয়াদ শেষে গ্রাহক বা বিমাকারীর মৃত্যুর পর নমিনি বা উত্তরাধিকারী টাকা পাবেন। 

১৯ বছর বয়সের একজন গ্রাহক ৫০ বছরের জন্যও পলিসি করতে পারেন। ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩৫ ও ৪০ বছর মেয়াদে পলিসির পূর্ণতা হবে। সে ক্ষেত্রে মাসে প্রতি হাজারের বিপরীতে মাত্র ২ টাকা ১০ পয়সা হারে প্রিমিয়াম দিতে হবে। 

সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা

ডাক জীবন বীমার গ্রাহকদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। দলিল চুক্তিতে রাষ্ট্রপতির সই থাকে। আর এ বিমার প্রধান আকর্ষণ হলো নিম্নহারের প্রিমিয়াম ও উচ্চহারের বোনাস। সব প্রতিষ্ঠানের যেমন উদ্দেশ্য থাকে পলিসি বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা, এ ক্ষেত্রে সরকার তা করে না। মুনাফার সবটুকুই বোনাস হিসেবে পলিসি গ্রাহকদের দিয়ে দেওয়া হয়। ডাক জীবন বীমার প্রিমিয়ামের পরিমাণও কম। যদিও এর পরিমাণ নির্ভর করে বিমাকারীর বয়স ও পলিসির মেয়াদের ওপর। 

ঘরে বসেই তথ্য

বর্তমানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ডাক জীবন বীমার সেবা পরিচালিত হচ্ছে। প্রস্তাবপত্র পূরণ করে দেশের যেকোনো ডাকঘরে প্রথম কিস্তির টাকা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের মুঠোফোন নম্বরে খুদে বার্তা (এসএমএস) চলে আসে। বিমাকারী জমা দেওয়া টাকার পরিমাণ ঘরে বসেই জানতে পারেন। আর বিমা পলিসির নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় ক্লিক করলেই জানা যায় সব তথ্য। কোনো অভিযোগ থাকলে ই-বার্তা পাঠালে ফিরতি ই-মেইল বার্তায় জবাব দেওয়ার ব্যবস্থাও করে রেখেছে ডাক বিভাগ। দেড় লাখের মতো ডাক জীবন বীমার পলিসি গ্রাহক রয়েছেন বলে ডাক অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।