এক দিনেই কেজিতে বাড়ল তিন থেকে সাড়ে চার টাকা

  • বাংলাদেশে বছরে গমের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন।

  • এই চাহিদার ৬৫-৬৭ লাখ টনই আমদানি করতে হয়।

  • বড় শিল্প গ্রুপ যাদের নিজস্ব আটা-ময়দার কারখানা আছে, তারা সরাসরি আমদানি করে।

  • আবার গম এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করে বড় শিল্প গ্রুপ।

ভারত গম রপ্তানি বন্ধের পর পাইকারি বাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম দিন ছিল গতকাল সোমবার। প্রথম দিনেই খাতুনগঞ্জে গমের দাম একলাফে গড়ে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। কেজি হিসেবে বেড়েছে তিন থেকে সাড়ে চার টাকা।

শুধু খাতুনগঞ্জ নয়, দাম বেড়েছে বিশ্ববাজারেও। খাতুনগঞ্জের মতো গতকাল সোমবার খুলেছে বৈশ্বিক পণ্যবাজার। লেনদেনের শুরুতে দর বাড়ার শীর্ষে উঠে আসে গম। সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের গমের দাম বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।

গত শুক্রবার ভারত হঠাৎ গম রপ্তানি বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে। ভারত এমন সময়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যখন বাংলাদেশের গম আমদানির ৬৩ শতাংশ দেশটি থেকে আসছিল। নিষেধাজ্ঞার কারণে তুলনামূলক কম খরচে ও কম সময়ে আমদানির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ভারত রপ্তানি বন্ধের পর সোমবার প্রথম পুরোদমে লেনদেন শুরু হয় পাইকারি বাজারে। বেড়েছে বিশ্ববাজারেও।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে গমের দাম বাড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। গত শনি ও রোববার বন্ধের সময়েও সীমিত লেনদেনে বাড়ছিল এই পণ্যটির দাম। ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে গতকাল মানভেদে ও সরবরাহের স্থানভেদে কেজিপ্রতি ভারতীয় গম বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা ৭৩ পয়সা। রপ্তানি বন্ধের আগে এই গম বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৩৭ থেকে ৩৯ টাকা ৩৯ পয়সা। কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে তিন টাকার কম-বেশি।

গতকাল বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কানাডার উচ্চ আমিষযুক্ত গমের দাম। রপ্তানি বন্ধের আগে এই গম প্রতি কেজি ৫১ টাকা ৭১ পয়সায় বিক্রি হয়েছিল। গতকাল এক দিনে সাড়ে ৪ টাকা বেড়ে ৫৬ টাকা ২৭ পয়সায় উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ার গমের দাম প্রতি কেজিতে ৪ টাকা ২৯ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৫৩ টাকা ৫৯ পয়সা।

খাতুনগঞ্জের আরএম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সাহেদ উল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা গমের একচেটিয়া সরবরাহ ছিল। দেশটি রপ্তানি বন্ধের প্রভাবে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। বিশ্বের কমোডিটি এক্সচেঞ্জগুলোতে ভারতের রপ্তানি বন্ধের প্রভাবে দাম বাড়ছে।

ভারত অনিয়মিতভাবে গম রপ্তানি করে। সর্বশেষ দুই বছর ধরে রপ্তানি করছে তারা। আবার রপ্তানি বন্ধের আগে ভারতের গম রপ্তানির ৫৭ শতাংশের গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ। এর বাইরে শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও নেপালে গম রপ্তানি করে দেশটি। এরপরও রপ্তানি বন্ধের কারণে গম আমদানির চাহিদা বাড়বে—এমন শঙ্কা থেকেও বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে।

রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার খবর জানাজানির আগে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে প্রতি টন গম বিক্রি হয়েছিল ৪২৮ দশমিক ৮৮ ডলার দরে। গতকাল লেনদেনের একপর্যায়ে শিকাগোতে এই দর উঠেছে ৪৫৬ ডলার। প্রতি টন গমের দাম বেড়েছে প্রায় ২৮ ডলার। প্রতি কেজিতে আড়াই টাকা। এর আগে শিকাগোতে সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর গত ৭ মার্চ। এদিন প্রতি টন গম ৫২৩ ডলারে লেনদেন হয়।

অস্থিরতার কারণে বিশ্ববাজার থেকে এখন আমদানিতে নতুন করে বাড়তি খরচ করতে হবে। তবে তা কত এখনই বলা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের হিসাবে সোমবার বুক করা হলে প্রতি কেজিতে চার টাকা বেশি দিতে হবে। দাম যত বাড়বে, দেশে রুটি-পরোটা থেকে গমের সব খাদ্যপণ্যের দামও বাড়বে।

বাংলাদেশে বছরে গমের চাহিদা প্রায় ৭৫ লাখ টন। এই চাহিদার ৬৫-৬৭ লাখ টনই আমদানি করতে হয়। বড় শিল্প গ্রুপ যাদের নিজস্ব আটা-ময়দার কারখানা আছে, তারা সরাসরি আমদানি করে। আবার গম এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রিও করে। পাইকারি বাজার থেকে গম কেনে ছোটখাটো আটা-ময়দার কারখানাগুলো।

প্রতিবেশী দেশ গম পাবে: ভারতীয় হাইকমিশন

গমের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সরকার তাদের নিজ দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত থেকে গম আনতে পারবে। এ ছাড়া রপ্তানির জন্য ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ গমের চালানের ওপর ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না।

গত রোববার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন তাদের ওয়েবসাইটে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে ভারত থেকে গম রপ্তানির ওপর ‘নিষেধাজ্ঞা’র খবর প্রকাশিত হয়েছে। ভারতে অভ্যন্তরীণ খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, খাবারের মূল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত মুদ্রাস্ফীতি প্রশমনের পাশাপাশি ভারতের প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশের খাদ্য নিরাপত্তার প্রকৃত চাহিদা মেটাতে এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে।