এক প্রান্তিকে ভালো না করলেও ভারতের ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ২০২১–২২ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (জানুয়ারি–মার্চ) মাত্র ৪ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে অর্থাৎ চার প্রান্তিক মিলিয়ে দেশটি এই অর্থবছরে জিডিপিতে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে। অবশ্য এর আগের ২০২০–২১ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতি তথা জিডিপিতে কোনো প্রবৃদ্ধি তো হয়ইনি, বরং বড় ধরনের সংকোচন ঘটেছিল, যা শতকরা হারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় ২০২১–২২ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে। এতে অবশ্য দেখা গেছে যে দেশটিতে টানা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অর্থনীতির গতি কমেছে। এই অর্থবছর শেষে সেই দেশের জিডিপি তথা অর্থনীতিতে সামগ্রিকভাবে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয়েছিল।

আলোচ্য জানুয়ারি–মার্চ ত্রৈমাসিকে ভারতের কৃষি খাতের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ। তবে এই সময়ে উৎপাদন খাতে কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি, বরং তা শূন্য দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। একই সময়ে দেশটিতে জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য পরিষেবা—এসব সরকারি ব্যয়ের খাতগুলোয় ব্যয় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এটাকে অবশ্য ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।

ভারতীয় অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মধ্যে খনি খনন ও নির্মাণ খাতে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জিডিপিতে এই খাতগুলোর অবদান বা হিস্যা ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ, যা তৃতীয় প্রান্তিকে ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমেছিল।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০–২১ সালে দেশটির অর্থনীতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হারে সংকুচিত হয়েছিল। অবশ্য এর আগের ২০১৯–২০ অর্থবছরে ভারতের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র দেড় শতাংশ। সর্বশেষ ২০২১–২২ অর্থবছরে বেড়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ উন্নীত হয়েছে। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয় (এনএসও) অবশ্য এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করেছিল।

এদিকে বড় সংকোচনের পরই আবার উল্লেখযোগ্য হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এখন প্রশ্ন উঠেছে, এরপর ভারতের অর্থনীতিতে কী ঘটতে চলেছে? গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলি চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরে ভারতের জিডিপিতে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়। এর আগে তারা ৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে পড়া, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার প্রভাবে ভারতের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমায় মরগান স্ট্যানলি।

একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসও গত মাসে পূর্বাভাস দেয় যে চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপিতে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। এর আগে সংস্থাটি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।