এবারও শীর্ষ করদাতা কাউছ মিয়া

এবারও দেশের শীর্ষ করদাতা হলেন কাউছ মিয়া। ২০১৫-১৬ করবর্ষে তিনি ১৮ লাখ করদাতার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কর দিয়েছেন। এরই স্বীকৃতি হিসেবে গতবারের মতো এ বছরও তাঁকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। তিনি হাকীমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক। বর্তমানে তিনি থাকেন রাজধানীর আগা নওয়াব দেউড়ি লেনে।
কাউছ মিয়ার আদিবাড়ি চাঁদপুর জেলায়। অশীতিপর এই ব্যবসায়ীর জর্দার পাশাপাশি শিপিংসহ অন্য ব্যবসাও রয়েছে। এর আগেও তিনি কয়েকবার শীর্ষ ১০ করদাতার তালিকায় ছিলেন।
গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রথমবারের মতো শীর্ষ ১০০ করদাতার তালিকা প্রকাশ করেছে। ২০১৫-১৬ করবর্ষে দেওয়া করের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
শীর্ষ করদাতাদের প্রথম ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই একই পরিবারের। তালিকার দ্বিতীয় থেকে সপ্তম স্থান পর্যন্ত রয়েছেন এই একই পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা হলেন খাজা তাজমহল, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, এম এ হায়দার হোসেন ও মোহাম্মদ ইউসুফ। তাঁরা পারিবারিকভাবে ওষুধের ব্যবসা করেন। এই পরিবার ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী। গতবারও দ্বিতীয় থেকে সপ্তম স্থানে ছিলেন এ পরিবারের সদস্যরা।
অষ্টম স্থানে ঢাকার ব্যবসায়ী খন্দকার বদরুল হাসান। আর নবম হয়েছেন সার ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত কামরুল আশরাফ খান। আর দশম সেরা করদাতা হয়েছেন গাজী গ্রুপের পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী। উৎপাদন, রিয়েল এস্টেট, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে গাজী গ্রুপের।
শীর্ষ ১০০ করদাতার তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছেন স্কয়ার গ্রুপের উদ্যোক্তারা, যাঁদের মধ্যে আছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর তিন ছেলে স্যামুয়েল এস চৌধুরী, তপন চৌধুরী, অঞ্জন চৌধুরী ও মেয়ে রত্না পাত্র। এই ভাই-বোনেরা তালিকার ১৫ থেকে ২৬ নম্বরের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছেন। ২২ নম্বরে আছেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। তালিকায় তাঁর ঠিক পরের স্থানটিতেই রয়েছেন হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ।
প্রথম ৫০ জনের মধ্যে আরও আছেন চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী এ কে খানের ছেলে সদরুদ্দীন খান, দ্য এক্মি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান সিনহা, ইসলাম গ্রুপের চেয়ারম্যান মনজুরুল ইসলাম, আরএকে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামান ও নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। শীর্ষ করদাতার ৫০তম স্থানটিতে রয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি লোটাস কামাল গ্রুপের উদ্যোক্তা।
৫১ থেকে ১০০তম স্থান পর্যন্ত এই তালিকায় যেসব করদাতা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন—এসিআই লিমিটেডের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা, এ কে খান গ্রুপের সালাহউদ্দিন কাশেম খান, এ কে শামসুদ্দীন খান ও জিয়া উদ্দিন খান, ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক শাহনাজ রহমান, দ্য এক্মি ল্যাবরেটরিজের চেয়ারম্যান আফজালুর রহমান সিনহা, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা, নিটল নিলয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের ছেলে আবদুল মুসাব্বির আহমাদ, গাজী গ্রুপের পরিচালক গাজী গোলাম মুর্তজা।
এর পাশাপাশি এনবিআর শীর্ষ ১০০ নারী করদাতার তালিকাও প্রকাশ করেছে, যেখানে প্রথম স্থানটিতে রয়েছেন খাজা তাজমহল। অনূর্ধ্ব ৪০ বছর বয়সী করদাতাদের শীর্ষ ১০০ জনের তালিকাও দেওয়া হয়েছে। আর এখানে শীর্ষ স্থানটি দখলে নিয়েছেন কবির হোসেন শিমুল। তিনি ঢাকার কর অঞ্চল-১৫-এর করদাতা।
এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলন এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলিয়ে এবার ১২৫ করদাতাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। তাঁরা ট্যাক্স কার্ড পাবেন।
তিন শ্রেণির শীর্ষ ১০০ করদাতার মধ্য থেকে পেশাভিত্তিক বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। ট্যাক্স কার্ডধারীরা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাবেন। এ ছাড়া যেকোনো রাষ্ট্রীয় সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাঁরা অগ্রাধিকার পাবেন। তবে কোনো করদাতার যদি রাজস্ব পাওনা নিয়ে মামলা থাকে, তাহলে ওই করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড দেওয়ার প্রাথমিক বাছাইয়ে বাদ দেওয়া হবে।

সেরা ১০

কাউছ মিয়া, খাজা তাজমহল, রুবাইয়াৎ ফারজানা হোসেন, লায়লা হোসেন, হোসনে আরা হোসেন, এম এ হায়দার হোসেন ও মোহাম্মদ ইউসুফ, খন্দকার বদরুল হাসান, কামরুল আশরাফ খান ও গোলাম দস্তগীর গাজী