এলডিসি উত্তরণ সম্ভব হয়েছে তথ্য–উপাত্তের কারণে

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এটি জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের ব্যাপার। বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ যে উতরে গেছে, তার তথ্য-উপাত্ত সময়মতো পেশ করতে হয়েছে। বিবিএস বা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এ কাজটি সময়মতো করেছে। সে জন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। আজ এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।

মহামারির সময় তথ্যভিত্তিক নীতি প্রণয়ন নিয়ে ভার্চ্যুয়াল এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে সিপিডি। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, কোভিডের সময় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোগীদের যে তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। টিকাদানেরও তথ্যভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। তবে সেই তথ্যভান্ডারের কিছু অসম্পূর্ণতা আছে। যেমন, সুরক্ষা অ্যাপে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষের জন্য আলাদা ক্যাটাগরি বা শ্রেণি করা হয়নি। ফলে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষেরা কতজন টিকা পেলেন, তার তথ্য চাইলেই পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা দেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মুনতাসির কামাল। তিনি বলেন, মহামারির সময় সরকারি নীতি প্রণয়নে তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার বেড়েছে। এখন অন্যান্য খাতেও নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তের ব্যবহার বৃদ্ধি করা দরকার। সে জন্য গবেষক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হচ্ছে, নীতি প্রণেতাদের তথ্য-উপাত্তের গুরুত্ব সম্পর্কে ক্রমাগত মনে করিয়ে দেওয়া।

মুনতাসির কামালের পরামর্শ, নীতি প্রণয়নে তথ্য–উপাত্তের ব্যবহার কীভাবে কাজে আসে, এই অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করা দরকার। তাতে মানুষ বুঝতে পারবে, তথ্য-উপাত্ত কীভাবে কাজে আসে।

নীতি প্রণয়নে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের জন্য দেশে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার প্রয়োজন বলে মত দেন বক্তারা। এটি থাকলে কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া সুবিধাজনক হবে। অনেকেই বলেন, নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এই কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার করা যায়। কিন্তু অসুবিধা হলো, অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে না। সে জন্য সবার পৃথক পরিচিতি থাকা দরকার বলে মত দেন এ টু আই প্রকল্পের আনির চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তি ক্রমেই প্রসারিত হচ্ছে। এখন আর বড় বড় প্রকল্প করে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের বাস্তবতা নেই; সামাজিক মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং, মোবাইল—এসব জায়গা থেকেও তথ্য সংগৃহীত হতে পারে। অনেক দেশ এখন দারিদ্র্যের হার নিরূপণে মোবাইল ব্যবহারের তথ্যর ব্যবহার করে, এতে বিভিন্ন দুর্যোগের তাৎক্ষণিক প্রভাব নিরূপণ করা সহজ হয় বলে মত দেন তিনি।
কিন্তু দেশে কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার করার ক্ষেত্রে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে বলে জানান বক্তারা। দক্ষতা-প্রশিক্ষণের অভাবের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতাও অনেক ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের মাঝেই আবার তথ্য ভীতি কাজ করে। তাঁরা মনে করেন, তথ্য-উপাত্ত সবার লভ্য হলে সমস্যা হতে পারে। ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তথ্যভান্ডারের প্রয়োজনীয়তা আছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাকের মোরশেদা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।