এলডিসি থেকে উত্তরণের সুপারিশ পেল বাংলাদেশ

  • যোগ্যতা নির্ধারণের সূচক তিনটি—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা।

  • ২০১৮ ও ২০২১ সালের মূল্যায়নে তিন সূচকেই মান অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গতকাল শুক্রবার রাতে পাঁচ দিনের বৈঠক শেষে এ সুপারিশ করেছে। সিডিপির এলডিসি–সংক্রান্ত উপ–গ্রুপের প্রধান টেফেরি টেসফাসো গত রাতে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন। তবে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে বের হতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সাধারণত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ তুলনামূলক দুর্বল, সেসব দেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭১ সালে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা করা হয়। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে পাঁচ বছর পর এলডিসি থেকে বের হয়ে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে যাবে বাংলাদেশ।

সাধারণত সিডিপির চূড়ান্ত সুপারিশের তিন বছর পর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু করোনার প্রভাব মোকাবিলা করে প্রস্তুতি নিতে বাড়তি দুই বছর সময় দেওয়া হয়েছে। সিডিপির সঙ্গে গত ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের বৈঠকে বাংলাদেশও বাড়তি দুই বছর সময় চেয়েছিল।

এলডিসি থেকে বের হলে অনেক বাণিজ্যসুবিধা থাকবে না। তখন বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে
মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ ফেলো, সিপিডি

এবার বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওসও এলডিসি থেকে বের হওয়ার সুপারিশ পেয়েছে। সিডিপির পরপর দুবারের ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে নির্দিষ্ট মান অর্জন করলে এ ধরনের সুপারিশ করা হয়। ২০২১ সালের সিডিপির এ মূল্যায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি লাওস ও মিয়ানমার নির্দিষ্ট মান অর্জন করেছে। কিন্তু মিয়ানমারকে সুপারিশ করেনি সিডিপি। কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, সামরিক বাহিনী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করায় উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এলডিসি থেকে দেশটির বের হওয়ার সুপারিশের বিষয়টি ২০২৪ সাল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে নেপাল ২০১৮ সালেই দ্বিতীয়বারের মতো মান অর্জন করেছিল। কিন্তু ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠে দাঁড়াতে ওই বছর সুপারিশ করা হয়নি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, আগামী পাঁচ বছরকে প্রস্তুতিকাল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এলডিসি থেকে বের হলে অনেক বাণিজ্যসুবিধা থাকবে না। তখন বাণিজ্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়বে, তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।

এলডিসির তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ করল জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। তবে এলডিসি থেকে বের হতে আরও পাঁচ বছর লাগবে

এলডিসি থেকে কোন কোন দেশ বের হবে, সে বিষয়ে সুপারিশ করে থাকে সিডিপি। এ জন্য প্রতি তিন বছর পরপর এলডিসিগুলোর ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন করা হয়। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ, জলবায়ু ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা—এই তিন সূচক দিয়ে একটি দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে পারবে কি না, সেই যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। যেকোনো দুটি সূচকে যোগ্যতা অর্জন করতে হয় কিংবা মাথাপিছু আয় নির্দিষ্ট সীমার দ্বিগুণ করতে হয়।

অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে ৩২ পয়েন্ট বা এর নিচে থাকতে হবে। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ বা এর বেশি পয়েন্ট পেতে হবে। মাথাপিছু আয় সূচকে ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার থাকতে হবে। মাথাপিছু আয় হিসাবটি জাতিসংঘ করেছে অ্যাটলাস পদ্ধতিতে। সেখানে মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন বিষয় সমন্বয় করে তিন বছরের গড় হিসাব করা হয়।

বর্তমানে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ আছে। এ পর্যন্ত মালদ্বীপ, বতসোয়ানা, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, সামোয়া ও কেইপ ভার্দে—এই পাঁচ দেশ এলডিসি থেকে বের হয়েছে।