করপোরেট কর কমানো উচিত

আগামী ৩ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট এটি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বাড়ছে দারিদ্র্য, কমেছে কর্মসংস্থান। এত সব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ এবারের বাজেটে। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চেয়ে আছেন অর্থমন্ত্রীর নতুন বাজেটের দিকে। আগামী বাজেট কেমন হওয়া চাই—এ নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ছয়জন ব্যবসায়ী নেতা।

রূপালী চৌধুরী

বর্তমান বাস্তবতায় করোনা মোকাবিলায় প্রথমেই গুরুত্ব দিতে হবে টিকা প্রদানে। এখন পর্যন্ত মাত্র ২ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসলে অর্থনীতিও স্বাভাবিক হবে। তাই আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

শুল্ক-করের ক্ষেত্রে আমাদের প্রথম দাবি, করপোরেট কর কমানো। আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ করহার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সমান হারে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করতে হবে। অর্থাৎ বেসরকারি কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট করহার গড়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন বেসরকারি কোম্পানির করহার সাড়ে ৩২ শতাংশ। করোনাকালে এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না, তাই আগামী বছর করহার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত।

বর্তমানে লাভ-ক্ষতিনির্বিশেষ ৩ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেই দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। এটি করা হয়েছে মূলত কিছু প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে। যেমন কোনো কোনো কোম্পানি ২০ বছরেও লাভ দেখায় না। কিন্তু এসব কোম্পানির জন্য বাকি সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভুগতে হচ্ছে। প্রথম বছরেই লাভ হবে, এর নিশ্চয়তা নেই। প্রথম বছর থেকেই যদি কর দিতে হয়, তাহলে কোম্পানিগুলো মুনাফা করবে কীভাবে? না লাভ, না ক্ষতি বা ব্রেক ইভেনে যেতেই কয়েক বছর সময় লেগে যায়।

বর্তমানে একটি প্রতিষ্ঠান তার রাজস্ব আয়ের দশমিক ৫ শতাংশ পণ্য বা সেবার প্রচার-প্রসারে বা প্রমোশনাল খরচ হিসেবে দেখাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে একটি পণ্য বাজারজাত কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য রাজস্ব আয়ের ৫ থেকে ১৫ শতাংশ খরচ করে থাকে। তাই পণ্যের প্রচার-প্রসারের পেছনে খরচের সীমা বাড়িয়ে বাস্তবভিত্তিক করা উচিত।

আমদানি পর্যায়ে ৪ শতাংশ আগাম কর (ভ্যাট) দিতে হয়। পরে এই টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ অর্থের সরবরাহ বাড়াতে আগাম কর উঠিয়ে দিলে ব্যবসায়ীরা স্বস্তি পাবেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ভবন ভাড়ার ক্ষেত্রে ভ্যাট দিলে তা রেয়াত পাওয়া যায় না। এমন অনেক ভ্যাট দিতে হয়, তা ব্যবসায়ীদের জন্য এ সময়ে খরচের বোঝা ভারী করছে।

দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বাজেটে আমাদের চাওয়া হলো, করসংক্রান্ত নীতিতে কোনো পরিবর্তন করা হলে তার যেন ধারাবাহিকতা থাকে। যেমন কোনো পণ্যে প্রথম বছর ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলো। পরের বছরই তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। এতে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে যায়। সার্বিকভাবে কর জাল বৃদ্ধি করতে পারলে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়বে।

করোনাকালে রেস্তোরাঁ, সেলুন, খুচরা বিক্রেতা—এমন ছোট ছোট ব্যবসায়ীর চলতি মূলধন সহায়তার জন্য বাজেটে বরাদ্দ রাখা উচিত। তাহলে ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে যাবেন। পাশাপাশি যে আড়াই কোটি লোক নতুন গরিব হয়ে গেছেন, তাঁদের কর্মসংস্থানের জন্য বাজেটে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হতে চাইছি। সেই মর্যাদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাজারমুখী দক্ষ লোক তৈরি করতে হবে। কেননা বেসরকারি খাতে চাকরি দিতে চাইলেও দক্ষ লোক খুঁজে পাই না। বাজেটে তাই বাস্তবমুখী কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

শুধু বাজেটের আকার বাড়ালেই হবে না, বাজেট যেন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, সেদিকেও নজর দিতে হবে।