করের বোঝায় বাড়ছে দাম

নতুন একটি গাড়ির স্বপ্ন বাংলাদেশের প্রায় সব মধ্যবিত্ত পরিবারের রয়েছে। কিন্তু সাধ ও সাধ্যের মধ্যে বড় ফারাক থাকায় স্বপ্ন যেন বাস্তবায়ন হতে চায় না, থেকে যায় অধরা। সে জন্য অনেকেই নতুন গাড়ি কিনতে না পেরে রিকন্ডিশন্ড কিংবা ব্যবহৃত প্রাইভেট কার কেনার দিকে ঝুঁকে পড়েন।
বাংলাদেশে নতুন ও পুরোনো দুই ধরনের প্রাইভেট কার বিক্রি হয়। দাম কেমন হবে তা নির্ভর করে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের ওপর। নতুন গাড়ির দাম স্বাভাবিকভাবেই বেশি। আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম অনেকটাই কম। তবে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি যেহেতু কয়েক বছর ব্যবহৃত হয়েছে, সে জন্য ওই গাড়ি বা ইঞ্জিনের জীবনকালও কিছুটা কম থাকে। তাই নতুন গাড়ির দাম বেশি হলেও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চেয়ে বেশি দিন চালানো যায়, যা কেনাবেচার সময় গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য।
আবার নতুন বা পুরোনো যেকোনো গাড়ির ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপরও দাম নির্ভর করে। ইঞ্জিনের ক্ষমতা বা সিসি যত বেশি, সেই গাড়ির দাম তত বেশি।
উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, বিশ্বখ্যাত নিশান এক্স ট্রায়াল মডেলের ২০০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার নতুন একটি কারের দাম ৩৫ লাখ টাকা। আবার ১৫০০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার টয়োটা এক্স করোলা মডেলের রিকন্ডিশন্ড (পুরোনো) কার পাওয়া যায় ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকার মধ্যে। অর্থাৎ নতুন-পুরোনো এবং ইঞ্জিনের ক্ষমতাভেদে গাড়ির দামেরও তারতম্য ঘটে।
গাড়ির দাম ওঠা-নামা করার আরেকটি কারণ হলো শুল্ককর হারের পার্থক্য। নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে অনেক বেশি কর আরোপ করা হয়। আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে অবচয় সুবিধা থাকায় শুল্ককর হার অপেক্ষাকৃত কম হয়।
শুল্ককর যেভাবে নির্ধারণ করা হয়, তা সহজেই জানা যায়। যেমন: নতুন ও পুরোনো গাড়ি আমদানি করার সময় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক, সিসিভেদে সম্পূরক শুল্ক (১৫ থেকে ২৫০ শতাংশ), ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক), ৫ শতাংশ অগ্রিম কর, ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ৪ শতাংশ অগ্রিম ব্যবসায় মূসক (এটিভি) দিতে হয়।
তবে রিকন্ডিশন্ড বা পুরোনো গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অ্যাসেসেবল ভ্যালু বা শুল্কায়নের ভিত্তিমূল্য ধরে তার ওপর শুল্ক হার নির্ধারণ করেন কর কর্মকর্তারা। যত বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানি করা হয়, সেটির ভিত্তিমূল্য তত কম ধরা হয়। যদিও বাংলাদেশে পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানি করা যায় না।
ছয় মাস থেকে এক বছরের পুরোনো গাড়ির জন্য ১৫ শতাংশ, এক থেকে দুই বছরের জন্য ২৫ শতাংশ, দুই থেকে তিন বছরের জন্য ৩৫ শতাংশ, তিন থেকে চার বছরের জন্য ৪০ শতাংশ এবং চার থেকে পাঁচ বছরের জন্য ৪৫ শতাংশ অবচয় সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাৎ রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি মূল্য যদি ১০০ টাকা হয়, আর সেই গাড়ি যদি তিন বছরের পুরোনো হয়; তাহলে সেটি অবচয় সুবিধা পাবে ৩৫ শতাংশ। তখন গাড়িটির শুল্কায়নের ভিত্তিমূল্য দাঁড়াবে ৬৫ টাকা। আর এই ৬৫ টাকা ধরেই এটির ওপর সংশ্লিষ্ট আমদানি শুল্ক, সম্পূরক শুল্কসহ অন্যান্য শুল্ক আরোপ করা হবে। আর একই মডেলের নতুন গাড়ির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবচয় সুবিধা পাওয়া যাবে না।
এসব কারণে পুরোনো গাড়ির তুলনায় নতুন গাড়ির দাম বেড়ে যায়। এই খাতের সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা জানান, নতুন গাড়ি বেশি দিন ব্যবহার করা যায়। এসব গাড়ির স্থায়িত্ব থাকে কমপক্ষে ২০ বছর।