করোনার কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে

দেশের আবাসন খাতের নবীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম একটি ক্রিডেন্স হাউজিং লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান নতুন হলেও তার পেছনের মানুষটির রয়েছে আড়াই দশকের অভিজ্ঞতা। আবাসন খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ক্রিডেন্স হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুল করীম

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে মাত্র ছয় বছরেই দেশের আবাসন খাতে মোটামুটি একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে গেছে ক্রিডেন্স হাউজিং। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ বাজারে জায়গা করে নিতে আপনাদের কৌশল কী ছিল?

জিল্লুল করীম: ছয় বছর আগে ক্রিডেন্সের যাত্রা শুরু হলেও তার আগে আমি একটি আবাসন েকাম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক ছিলাম। ফলে আবাসন খাত নিয়ে মোটামুটি অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা যখন ক্রিডেন্স করলাম তখন বাজারটি অনেক সহজ ছিল। কারণ ২০০৪-০৫ সালের দিকে যখন ওই েকাম্পািন করেছিলাম তখন বাজারে অনেক প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। একটি জমি নেওয়ার জন্য অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারপর বাজারে বড় ধরনের কারেকশন (সংশোধন) হয়। অনেক কোম্পানি ব্যবসা থেকে ছিটকে যায়। বাজারে যারা টিকে ছিলে তাদের সবাই পেশাদার প্রতিষ্ঠান। সে কারণে ২০১৬ সালে আমাদের জন্য বাজারে প্রবেশ করাটা সহজ হয়। শুরু থেকে আমরা প্রকল্পের জন্য সুন্দর ও চাহিদা সম্পন্ন লোকেশন নির্বাচনে গুরুত্ব দিই। আধুনিক নকশার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিইনি। নির্মাণকাজের মান উন্নত করলাম। আরেকটি যেটি করলাম আমরা গ্রাহকদের যে ডেড লাইন দিতাম তার ৬-৭ মাস আগে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিলাম। এ রকম আরও কিছু কৌশলের কারণে ক্রিডেন্সের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়তে থাকে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বর্তমানে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবুজকে প্রাধান্য দেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আপনারা কী করছেন?

জিল্লুল করীম: আগে ছোট ছোট জমিতে যেসব আবাসন প্রকল্প হতো সেখানে সবুজকে প্রাধান্য দেওয়া হতো না। তবে আমরা শুরু থেকেই ছোট-বড় সব প্রকল্পে সবুজকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের নির্মিত ভবনের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত তাকালেই সবুজের খেলা চোখে পড়বে। বারান্দার পাশে আমরা বাগান করছি। নিচে সবুজ মাঠে বাচ্চাদের খেলা কিংবা বড়দের হাঁটার ব্যবস্থা থাকছে। তা ছাড়া ভবনের ছাদে বাসিন্দাদের বসার জায়গার পাশাপাশি সুন্দর বাগান করায়ও আমরা বিশেষ নজর দিচ্ছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ঢাকায় ফ্ল্যাটের দাম অনেক আগেই নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। তাদের নাগালের মধ্যে আনার কোনো উপায় আছে?

জিল্লুল করীম: দেশের সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় ঢাকায় জমির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। অনেকে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির নিয়ে শঙ্কার কথা বললেও জমির দামের তুলনায় সেটি কিছুই না। বর্তমানে ঢাকায় একটি আবাসন প্রকল্পের মোট খরচের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশই চলে যাচ্ছে জমির পেছনে। যদিও জমির মালিকের সঙ্গে আমরা পার্টনারশিপে (অংশীদারত্বে) আবাসন প্রকল্প করছি। আসলে জমির উচ্চমূল্যের কারণে ফ্ল্যাটের দাম নিম্ন মধ্যম আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাটের দাম নাগালের মধ্যে আনতে হলে বিভাগীয় শহর নিয়ে সরকারকে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। বিভাগীয় শহরে যদি উন্নতমানের হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা যায় তাহলে সেখানে ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হবে। আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোও বিভাগীয় শহরে বিনিয়োগ করবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ঢাকার আশপাশ ঘিরে আবাসন প্রকল্প করলে কী ফ্ল্যাটের দাম কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব?

জিল্লুল করীম: অবশ্যই সম্ভব। তবে তার আগে উন্নত যাতায়াতব্যবস্থা ও প্রয়োজনীয় নাগরিকসুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। আশপাশের এলাকা থেকে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে যদি ঢাকার মূলকেন্দ্রে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অনেকেই সেখানে চলে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমিও ঢাকার আশপাশের এলাকায় চলে যাব। বিশ্বের অনেক উন্নত শহর থেকেই প্রতিদিন প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ কাজ শেষে সন্ধ্যায় পার্শ্ববর্তী শহরে চলে যায়। আর আমাদের ঢাকায় উল্টো সেই পরিমাণ লোক প্রবেশ করে। আসলে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো একক প্রচেষ্টায় সাধারণ মানুষের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মানুষের জীবনের সঙ্গে করোনা নানাভাবে জড়িয়ে গেছে। নতুন এই সময়ে আবাসন ব্যবসায় কি পরিবর্তন আসছে?

জিল্লুল করীম: করোনার কারণে ব্যবসায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন সেটি হলো মানুষের, বিদেশমুখী প্রবণতা কমেছে। বিপদে পড়লে দেশেই থাকা যায় সেই চেতনা মানুষের মধ্যে জাগ্রত হয়েছে। ফলে নিজের একটি ফ্ল্যাট কেনার চিন্তা-ভাবনা অনেকেই করছেন। তাতে আবাসন খাতের ব্যবসা চাঙা হয়েছে। তা ছাড়া মহামারির কারণে মানুষের জীবনযাপনেও পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে ক্রেতারা বাসার মধ্যে ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল ও হাঁটার জায়গা চাচ্ছেন, যাতে বিশেষ সময়ে বাসার মধ্যেই পরিবার পরিজন নিয়ে স্বচ্ছন্দে বসবাস করা যায়। আমরাও ক্রেতাদের চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছি।