কর কমিয়ে ব্যবসা প্রসারের সুযোগ দিতে হবে

আগামী ৩ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট এটি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বাড়ছে দারিদ্র্য, কমেছে কর্মসংস্থান। এত সব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ এবারের বাজেটে। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চেয়ে আছেন অর্থমন্ত্রীর নতুন বাজেটের দিকে। আগামী বাজেট কেমন হওয়া চাই—এ নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ছয়জন ব্যবসায়ী নেতা।

শাকিল রিজভী

আমাদের দেশে করের নেটওয়ার্ক বা করজালের বিস্তৃতি খুব ছোট। এটি বড় করা দরকার। আমার চাওয়া আগামী বাজেটে এ বিষয়ে সরকার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেবে। তাতে অল্প কিছু মানুষের ওপর থেকে করের চাপ কমবে। কর কার্যালয়ে না গিয়ে কীভাবে সহজে ঘরে বসে কর দেওয়া যায়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের দেশে অনেক মানুষেরই করযোগ্য আয় রয়েছে। অনেকে কর দিতে আগ্রহীও। কিন্তু একবার করের জালে ঢুকে গেলে পরে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে, এ ভয়ে কর দেন না। যেকোনো কারণেই হোক, কর কার্যালয় নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যে একধরনের ভীতি রয়েছে। তাই কর কার্যালয়ে না গিয়ে করদাতারা যাতে ঘরে বসে কর দেওয়ার সুযোগ পান, সেই পথে যেতে হবে সরকারকে। বর্তমানে বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক ধরনের লেনদেন করা যায়। করদাতাদের জন্যও এ ধরনের সহজে কর দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।

আমাদের দেশে কোম্পানি পর্যায়ে করপোরেট করহার অনেক বেশি। এ করহার কমানো উচিত। একসময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহারের ব্যবধান ছিল ১০ শতাংশের মতো। এখন সেই ব্যবধানটি অনেক কমে গেছে। সার্বিকভাবে করপোরেট করহার কমানোর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির মধ্যেকার করহারের ব্যবধানটাও বাড়ানো উচিত। এতে ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ তৈরি করা হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের যত বেশি প্রসার হবে সরকারের রাজস্ব আয় তত বাড়বে। আমাদের দেশে উল্টোটা। করের চাপেই ব্যবসা করা দায়। করের এমন সব ব্যবস্থা এ দেশে রয়েছে যেখানে লাভ হোক বা লোকসান—কর দিতেই হবে। কিন্তু আমি চাই, আগামী বাজেটে সরকার কর কমিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ব্যবসা ও শিল্প প্রসারের সুযোগ করে দেবেন।

শেয়ারবাজারের লেনদেনের ওপর অগ্রিম করের কথায় ধরা যাক। শেয়ার বিক্রি করে লাভ হোক বা লোকসান লাখে ৫০ টাকা অগ্রিম কর কেটে রাখা হয়। কেনাবেচা উভয় ক্ষেত্রেই এ কর কাটা হয়। দেখা গেল বছর শেষে কোনো ব্রোকারেজ হাউস লোকসান করেছে কিন্তু তার কাছ থেকে আগেই বিপুল পরিমাণ অগ্রিম কর কেটে নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যবসার সক্ষমতা কমে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করের হিসাব করা হয় কোম্পানির লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে শেয়ারবাজারে লেনদেন পর্যায়ে লাখে ৫ টাকা কর নেওয়া হয়। আমরা চাই বাংলাদেশেও সেটি কমানো হোক।