কাজের জন্য বিদেশে যেতে মিলছে ব্যাংকের ঋণ

বিদেশে গিয়ে কাজ করতে চাইছেন, কিন্তু যাওয়ার পুরো খরচ নেই আপনার হাতে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনার পাশে আছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ব্যাংকটি বিদেশে যাওয়ার জন্য আপনাকে ঋণ দেবে। ঋণের জন্য কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখতে হবে না।

বিদেশে যাওয়ার জন্য বেকার লোকদের ঋণ দিতেই ২০১১ সালে গঠন করা হয় প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। যাত্রা শুরুর পর থেকে প্রতিবছর এই ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণকারী বাড়ছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম তিন বছরে ব্যাংকটি থেকে ঋণ নিয়েছিলেন বিদেশগামী ৬ হাজার কর্মী, ছয় বছরের মাথায় যা বেড়ে চার গুণ হয়েছে।

তবে ঋণ পেতে চাইলে বৈধ ভিসা থাকতে হবে। ভিসাটা সংগ্রহ করতে হবে নিজেকে, অর্থাৎ ব্যাংক কোনো ভিসা পাইয়ে দেবে না। ভিসা থাকলে ঋণ দেওয়া হবে ভিসার মেয়াদের ওপর ভিত্তি করে। ঋণের পরিমাণ ১ থেকে ২ লাখ টাকা। ঋণের মেয়াদ সাধারণত ২ বছর। গ্রেস পিরিয়ড রয়েছে আরও দুই মাস। সব মিলিয়ে ঋণ দেওয়া হচ্ছে ২৬ মাসের জন্য এবং সুদের হার ৯ শতাংশ।

ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোও অত কঠিন নয়। বৈধ ভিসার পাশাপাশি বিদেশগামী কর্মীকে যে কোম্পানি কাজ দেবে বা নিয়োগ করবে, সেই কোম্পানির নিয়োগপত্রটা লাগবে। লাগবে সত্যায়িত তিন কপি ছবি, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানাসংবলিত পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নেওয়া সনদ, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। আরও লাগবে স্থানীয় বা ঘনিষ্ঠ এক বা একাধিক ব্যক্তির ব্যক্তিগত জামিননামা।

বড় কথা হচ্ছে, আবেদনের তিন দিনের মধ্যে ঋণের প্রক্রিয়া শেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আবেদনকারীকে মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) দিয়ে জানিয়ে দেয়। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া—এসব দেশের ক্ষেত্রে দুই বছর, তবে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে এক বছর।

২০১৪ সালের জুনে প্রকাশিত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ‘অগ্রগতির তিন বছর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন বছরে ৬ হাজার ৫০০ জন কর্মীকে বিদেশে যেতে ৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং ঋণের টাকা আদায়ের হার ৯৭ শতাংশ।

যোগাযোগ করলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আ ন ম মাসরুরুল হুদা সিরাজী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠার ছয় বছরে মোট ২৪ হাজার জনকে ঋণ দেওয়া হয়েছে ২৩০ কোটি টাকার মতো এবং আদায়ের হার ৯০ শতাংশ।

বিদেশে যেতে ঋণ চেয়ে যে পরিমাণ আবেদন আসে, টাকার অভাবে সবগুলোতে সাড়া দেওয়া যায় না বলে জানান মাসরুরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘তফসিলভুক্ত ব্যাংক হতে পারলে আমরা প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) আনতে পারতাম। তখন ব্যাংকের আয় বাড়ত এবং আরও বিদেশগামী কর্মীর জন্য ঋণ দেওয়া যেত।’

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন বর্তমানে ১০০ কোটি টাকা। তফসিলভুক্ত ব্যাংক হতে গেলে ৪০০ কোটি টাকার দরকার। গত ১৭ এপ্রিল ওয়েজ আর্নারস কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০ কোটি টাকার একটি চেক প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডির কাছে তুলে দেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি। বাকি ২৫০ কোটি টাকাও সরকার দেবে বলে জানা গেছে।

বাজেট পেশের আগে গত ৩ মে সংসদে উপস্থাপিত সাংসদ মনিরুল ইসলামের (যশোর-২) প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘নতুন তিনটি এনআরবি ব্যাংকও এ ধরনের (প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মতো) ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী তারা এক থেকে তিন বছর মেয়াদে ৩ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে। তবে এ ঋণের সুদের হার ১৪ শতাংশ।