কারখানা পরিদর্শনে অব্যবস্থাপনা

এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪৫০, ঢাকায় ১২০, গাজীপুরে ৯৯ ও নারায়ণগঞ্জে ৯৭ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫২ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার পর কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। সেই কমিটি প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনে ১০৮টি দল গঠন করেছে। তারা ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৮৭৫টি কারখানায় পরিদর্শন সম্পন্ন করেছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নেতৃত্বে পরিচালিত এই পরিদর্শন কার্যক্রমে নানা দুর্বলতা রয়েছে। ১১টি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিদর্শন দল গঠন করা হয়েছে। দাপ্তরিক ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় কর্মকর্তারা সময় দিতে পারছেন না। প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরে জনবলের ঘাটতি রয়েছে। যানবাহনের সংকটেও পরিদর্শনকাজ ব্যাহত হচ্ছে। আবার পরিদর্শনের যে চেক লিস্ট করা হয়েছে, সেটিও বেশ লম্বা। তা ছাড়া পরিদর্শনে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ব্যবস্থাপনায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) দুর্বলতা রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ‘কর্মক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনা ও শ্রমিক নিরাপত্তা: নিরসনের উদ্যোগ কোথায়’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এসব অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন ও প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট সালেহ মোস্তফা এবং ক্রিশ্চিয়ান এইডের প্রোগ্রাম অফিসার নুজহাত জাবিন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতের বাইরের কারখানাগুলো দেশের ভেতরে ও বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিদেশি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে আকৃষ্ট করতে হলে কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ নিরাপদ করতে হবে। রাজনৈতিকভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে উদ্যোগটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, গত ছয় মাসে শিল্পকারখানায় ৮২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে ১৬৭ শ্রমিক নিহত ও ২৫৬ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এর মানে প্রতি দুই দিনে একটি করে দুর্ঘটনা ঘটেছে। শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড। ঢাকা ও এর আশপাশে, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে অগ্নিদুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।

প্রাথমিকভাবে গত তিন মাসে ৫ হাজার কারখানা পরিদর্শনের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। আবার দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার কারখানাগুলোয় পরিদর্শন তুলনামূলক কম হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৪৫০, ঢাকায় ১২০, গাজীপুরে ৯৯ ও নারায়ণগঞ্জে ৯৭ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে। ঢাকা ও এর আশপাশ এবং নারায়ণগঞ্জের এত কমসংখ্যক কারখানা পরিদর্শন স্বাভাবিক নয় বলে মনে করেন সিপিডির এই গবেষক।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিডার নেতৃত্বে কারখানা পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থাকে (আইএলও) যুক্ত করা হয়নি। এটি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, পরিদর্শনপ্রক্রিয়ায় আইএলওকে যুক্ত করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংস্থাটি যুক্ত থাকলে এই প্রক্রিয়ার গুণমান উন্নত হবে। পরিদর্শন কার্যক্রমেও গতি আসবে।

সিপিডির এই গবেষক বলেন, পরিদর্শন কার্যক্রমে গতি আনতে প্রক্রিয়াটি সহজ করতে হবে। দ্রুত প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ করে পরবর্তী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। পরিদর্শনের তথ্য-উপাত্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াটি সহজ হবে বলে মনে করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।