কোন দেশ কতটুকু ঘুরে দাঁড়িয়েছে

বলা হচ্ছে ১৯২৯ এবং ২০০৯ সালের মহামন্দার চেয়েও করোনা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০২০ সালে কেবল চীন ছাড়া অর্থনৈতিক সংকোচন দেখেছে বিশ্বের বাকি সব বড় অর্থনীতির দেশগুলো। কার্যকর একটি টিকা আসার আগ পর্যন্ত সংক্রমণ মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো বড় অর্থনীতিগুলোকেও। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট মহামারিতে ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

তবে সংস্থাটি মনে করছে, ২০২১ সালে ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসতে পারে। তবে করোনার মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে নতুন বছরেরও সাড়ে চার মাস কেটে গেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কতটুকু ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাই এখন দেখার বিষয়।

ওইসিডিভুক্ত দেশের অর্থনীতির অবস্থা

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) হিসাবে, ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর জন্য চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক খুব ভালো হয়নি। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে ওইসিডি অঞ্চলের অর্থনীতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখেছে। ২০২০ সালের শেষ প্রান্তিকে ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১ শতাংশ। সম্প্রতি সংস্থাটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

করোনা মোকাবিলায় বছরের শুরুতে কিছুটা কঠোর পদক্ষেপ নিতে হওয়ায় প্রবৃদ্ধির হার কমেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।ওইসিডিভুক্ত ৩৭টি দেশের অর্থনীতির মধ্যে বড় সাতটি দেশের অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে একত্রে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে।

এর মধ্যে জার্মানির অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, যুক্তরাজ্য ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জাপানের অর্থনীতি ১ দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। অথচ তিনটি অর্থনীতিই এর আগের প্রান্তিকে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখেছিল। এমনকি রয়টার্সের বিশ্লেষকের জরিপ অনুযায়ী, জার্মানি এতটা সংকুচিত হবে বলে ভাবা হয়নি।

রয়টার্সের বিশ্লেষকেরা ভেবেছিলেন, জার্মানির অর্থনীতি ১ দশমিক ৫ শতাংশ সংকুচিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তার চেয়ে বেশি। মূলত কোভিড সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের কারণেই দেশটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ওইসিডিভুক্ত সাতটি বড় অর্থনীতির মধ্যে কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ওইসিডির তথ্য অনুযায়ী, দুটো দেশেরই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬ শতাংশ হারে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে কানাডার প্রবৃদ্ধি হয় ২ দশমিক ২ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ১ দশমিক ১ শতাংশ।

চীনের অর্থনীতি

কোভিড-১৯ মহামারির ধকল কাটিয়ে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় রেকর্ড ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। ওইসিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯২ সাল থেকে অর্থবছরের প্রান্তিক হিসাব রাখতে শুরু করে চীন। এরপর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন। অবশ্য অর্থনীতিবিদেরা ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করেছিলেন।

সে হিসাবে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। করোনা মহামারির কারণে গত বছরের শুরুটাতে পুরোপুরি লকডাউন জারি ছিল চীনে। ফলে ওই বছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাপক সংকুচিত হয় দেশটির অর্থনীতি। তাই ওই প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনায় এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির ব্যাপক উত্থান দেখা গেছে। এ বছর চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ।