ক্যান্ডি-চুইংগামের বাজার বাড়ছে

>
- দেশে ক্যান্ডি, লজেন্স, চুইংগাম, ললিপপ প্রভৃতি সুগার কনফেকশনারি পণ্যের বাজার ১,৪০০ কোটি টাকার
- প্রতিবছর ১০-১৫% হারে বাড়ছে।
ক্যান্ডি বা লজেন্স পছন্দ করে না এমন শিশু খুঁজে পাওয়া মুশকিল। শুধু শিশুরাই নয়, কিশোর-তরুণ এমনকি বড়দেরও অনেকেই চিনি দিয়ে তৈরি এই খাদ্যপণ্য বেশ পছন্দ করেন। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে অনেকে চুইংগাম চিবান। আবার অনেক সময় দোকানে কিছু কিনতে গেলে ১-২ টাকা ভাংতি না থাকলে দোকানিরাও ধরিয়ে দেন একটি-দুটি ক্যান্ডি অথবা লজেন্স।
ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের কাছেই ক্যান্ডি, লজেন্স, চুইংগামের মতো পণ্যগুলো কমবেশি প্রিয়। এগুলো হচ্ছে মূলত একধরনের মিষ্টি স্বাদের সুগার কনফেকশনারি পণ্য, যা প্রকৃতপক্ষে ঘনীভূত চিনিমিশ্রিত পানি। এতে বিভিন্ন ধরনের স্বাদ ও সুগন্ধ যুক্ত করা হয়, এই যা।
দেশে বহু আগে থেকেই চিনি গলিয়ে কাঠিতে ক্যান্ডি ও লজেন্স তৈরির প্রচলন আছে। এখনো দেশের অনেক জায়গায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এ ধরনের লজেন্স তৈরি করেন। সময়ের বিবর্তনে ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন শিল্পকারখানায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে এসব পণ্য। তবে বেশ কয়েকটি বড় শিল্পগোষ্ঠী এখন দেশে বাণিজ্যিকভাবে ক্যান্ডি, লজেন্স, ললিপপ, চুইংগাম ইত্যাদি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এর মধ্যে প্রাণ-আরএফএল, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ড্যানিশ প্রভৃতি কোম্পানি উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়া ইউরোপীয় বহুজাতিক ব্র্যান্ড পারফেটি ভ্যান মেল (পিভিএম) এ দেশে তাদের নানা ধরনের ক্যান্ডি ও চুইংগাম পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের পাশাপাশি তিতাস, এলসন, মাদার ভরসা নামের কয়েকটি ছোট ব্র্যান্ডের ক্যান্ডিও বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী প্রাণ-আরএফএল ২০০০ সাল থেকে ক্যান্ডি, ললিপপ ও বাবল গাম বাজারজাত করে আসছে। কাঁচা আমের স্বাদযুক্ত মিস্টার ম্যাংগো প্রাণের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যান্ডি ব্র্যান্ড। প্রতিষ্ঠানটির আরও আছে হজম ক্যান্ডি, প্রাণ ললিপপ, মিন্ট ফ্লেভার ক্যান্ডি ইত্যাদি। প্রাণ ললিপপ পাওয়া যায় পাঁচটি ফলের স্বাদে। তাদের গাজীপুরের কালিগঞ্জ ও নরসিংদীর পলাশে দুটি স্বয়ংক্রিয় কারখানায় এসব ক্যান্ডি উৎপাদিত হয়।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাতের স্পর্শ ছাড়া কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমাদের ক্যান্ডি ও ললিপপ উৎপাদন করা হয়। খেতে সুস্বাদু ও আকর্ষণীয়ভাবে মোড়কজাত হওয়ায় বাজারে এসব পণ্যের চাহিদা ভালো। আমরা সব সময় পণ্যের মান উন্নয়নে কাজ করি। এ কারণে প্রাণের হার্ড ক্যান্ডি বাজারের শীর্ষে রয়েছে।’
হার্ড ক্যান্ডির বাজারে আরেকটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড হলো পারফেটি ভ্যান মেল। এ ব্র্যান্ডের জনপ্রিয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে অ্যালপেনলিবে, মেন্টস, সেন্টার ফ্রুট, সেন্টার ফ্রেশ, জাস্ট জেলি ইত্যাদি। এর মধ্যে অ্যালপেনলিবে ক্যান্ডি ও ললিপপ দুভাবে বাজারে পাওয়া হয়। এসব ক্যান্ডি ক্যারামেল, স্ট্রবেরি, কফির মতো নানা স্বাদে পাওয়া যায়। পারফেটির জনপ্রিয় চুইংগাম ব্র্যান্ড হলো মেন্টস ও সেন্টার ফ্রেশ। এসব ব্র্যান্ডের অধীনে আবার নানা ধরনের পণ্য আছে।
সুগার কনফেকশনারি পণ্য উৎপাদনে পারফেটি ভ্যান মেল (পিভিএম) বিশ্বের শীর্ষ তিনটি কোম্পানির একটি। পিভিএম বাংলাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দেশে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসার শুরু ১৯৯০-এর দশকে। তখন আমদানি করে এ দেশে পণ্য বিক্রি করত তারা। ২০০৬ সালে গাজীপুরে নিজস্ব কারখানা স্থাপন করে পিভিএম বাংলাদেশ। ওই কারখানাসহ পিভিএম বাংলাদেশে বর্তমানে সরাসরি কর্মরত আছেন ৫০০ জন। এ ছাড়া পরোক্ষভাবে আরও দুই হাজার মানুষ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত।
প্রথম আলোকে দেওয়া পিভিএম বাংলাদেশের বক্তব্যে জানানো হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের গ্রাহকেরা এখন ভালো মানের পণ্যের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে কুণ্ঠা বোধ করেন না। এটি বাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। তাই ক্রেতাদের হাতে সব সময় সর্বোচ্চ মানের উদ্ভাবনী পণ্য তুলে দিতে কাজ করে পিভিএম।
ক্যান্ডির বাজারে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হলো অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ। দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানের তৈরি নানা স্বাদের ক্যান্ডি বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্য উল্লেখযোগ্য হলো জুসি লিচি, গ্রিন ম্যাঙ্গো, পাইনঅ্যাপল, রাইপ ম্যাঙ্গো, জুসি অরেঞ্জ, তেঁতুল, ঝাল তেঁতুল, টেস্টি মিল্ক, ক্রিমি ক্যারামেল, কুল ইত্যাদি। তাদের কাঁচা আম ও তেঁতুলের স্বাদে অলিম্পিক পালস ক্যান্ডিও বাজারে জনপ্রিয়।
আরেক দেশীয় শিল্পগোষ্ঠী পারটেক্স গ্রুপের ক্যান্ডি ব্র্যান্ড ড্যানিশের নানা স্বাদের ক্যান্ডি বাজারে আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ড্যানিশ গ্রিন ম্যাংগো, ড্যানিশ লিচু, ড্যানিশ রিচ মিল্কি ক্যারামেল, ড্যানিশ মিল্ক ক্যান্ডি, ড্যানিশ পাইনঅ্যাপল ক্যান্ডি প্রভৃতি।
দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা কয়েকটি ব্র্যান্ডের ক্যান্ডিও এখন বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
খাত-সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ক্যান্ডি ও চুইংগাম পণ্যের বাজার ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার। দেশি-বিদেশি সব ব্র্যান্ড এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্য নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বাজার। প্রতিবছর এই খাতে ১০–১৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।