ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাণ, প্যাসিফিক জিনসসহ রপ্তানিকারক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড
ছবি: কৃষ্ণ চন্দ্র দাস

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা। কারণ, এ ডিপোতে যেসব পণ্য ছিল, তার বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী। সেখানে তৈরি পোশাক, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের রপ্তানি পণ্য ছিল।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক–কর মওকুফের জন্য বন্ড কমিশনারেটের কাছে আবেদন জানানোর পাশাপাশি সেই তথ্য বিজিএমইএতেও জমা দিতে বলেছে।

জানা গেছে, রপ্তানির জন্য মিতালি গ্রুপ গত ৩১ মে বিএম কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক পাঠায়। এর মধ্যে একটি কনটেইনারে ছিল ছেলেমেয়েদের ৩৩ হাজার জ্যাকেট, যার রপ্তানিমূল্য ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার। আরেকটি কনটেইনারে ছিল ৫৫ হাজার টি–শার্ট, যার রপ্তানিমূল্য প্রায় দেড় লাখ ডলার।

এ ছাড়া একটি শীর্ষ রপ্তানিকারক গ্রুপ গত শুক্রবার বিএম কনটেইনার ডিপোতে পাঁচ লাখ পোশাক পাঠায়, যার মূল্য ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল ছিল ৭০ কনটেইনার, যার সবই নষ্ট হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করছেন রপ্তানিকারকেরা।

এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃত ক্ষতির হিসাব পেতে আরও দুই–তিন দিন সময় লাগবে। এ দুর্ঘটনায় রপ্তানি আয় সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে
—শহিদুল্লাহ্ আজিম, সহসভাপতি, বিজিএমইএ।

জানতে চাইলে বিজিএমইর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ্ আজিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এক হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃত ক্ষতির হিসাব পেতে আরও দু-তিন দিন সময় লাগবে। এ দুর্ঘটনায় রপ্তানি আয় সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।’

শহিদুল্লাহ্ আজিম জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে যাদের পণ্য ছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অনন্ত গ্রুপ, ফোর এইচ, ক্লিপটন, প্যাসিফিক জিনস, ইমপ্রেস ও জেএফকে সোয়েটার।

জানা গেছে, বিএম ডিপোর ঘটনায় পোশাক খাতের বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্এপ গ্রুপ প্রাণ–আরএফএল। এ শিল্পগ্রুপের প্রায় ৭০ কনটেইনারবোঝাই রপ্তানি পণ্য ছিল ওই ডিপোতে, যার পুরোটাই খাদ্যপণ্য। এসব খাদ্যপণ্য মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কথা ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজবোঝাই হয়ে গন্তব্যে পৌঁছার আগে পণ্যগুলো কনটেইনারবোঝাই অবস্থায় ডিপোতে রাখা হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রুপটির একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাঁদের পণ্যবোঝাই সব কনটেইনার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাতে তাঁদের ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন কারখানা থেকে কাভার্ড ভ্যানে রপ্তানি পণ্য এনে এ ডিপোর কনটেইনারে বোঝাই করা হয়। এরপর শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষে পণ্যভর্তি কনটেইনারগুলো বন্দরে নিয়ে বিদেশগামী জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া ৩৭ ধরনের পণ্য ডিপোতে এনে কনটেইনার খুলে খালাস করা হয়ে থাকে।

বিএম ডিপোতে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার রাখার ক্ষমতা ১০ হাজার একক। তবে কার্যকর ধারণক্ষমতা সাড়ে ৬ হাজার একক। গত বছর এ ডিপো আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ৭৭ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে।

বিএম ডিপো চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে অবস্থিত। বর্তমানে চট্টগ্রামের ১৬টি শিল্পগোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়, তার প্রায় ৯০ শতাংশই পরিবহন করা হয় এই ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপো থেকে।

আর বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের মধ্যে গড়ে ২৩ শতাংশ খালাস হয় এসব ডিপো থেকে। আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার ছাড়াও খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করে বেসরকারি ডিপোগুলো।