ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তাদের আলাদা প্রণোদনা দেওয়া হোক

আগামী ৩ জুন নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দিন চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট এটি। করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি, বাড়ছে দারিদ্র্য, কমেছে কর্মসংস্থান। এত সব সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারই বড় চ্যালেঞ্জ এবারের বাজেটে। ব্যবসায়ীরাও তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে চেয়ে আছেন অর্থমন্ত্রীর নতুন বাজেটের দিকে। আগামী বাজেট কেমন হওয়া চাই—এ নিয়ে কথা বলেছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকা ছয়জন ব্যবসায়ী নেতা।

মাহবুবুল আলম

করোনার প্রভাবে এখনো ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব চলছে। এ সময়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট চাই। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা। তাঁদের জন্য বাজেটে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আলাদা বরাদ্দ রাখা উচিত। তাহলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি বাড়বে। ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক উদ্যোক্তারা সহজে ব্যাংকের অর্থায়ন পান না। তাই তাঁদের জন্য ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

করের ক্ষেত্রে সংস্কারের অনেক জায়গা রয়ে গেছে। করোনার প্রভাব বিবেচনায় শিল্প খাতে করভার পুনর্বিন্যাস করা দরকার। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করহার কমানো দরকার। পাশাপাশি পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত নিট সম্পদের ওপর যে সারচার্জ আরোপিত আছে, তা শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। বর্তমানে ইস্পাতশিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ধার্য রয়েছে। বাজারজাতকরণ ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সমন্বয়ের বিধান থাকলেও ইস্পাতশিল্পের উদ্যোক্তাদের হাজার কোটি টাকা আটকে আছে রাজস্ব বিভাগে। অথচ ছয় মাসের মধ্যে অগ্রিম কর সমন্বয়ের কথা। এ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দুই মাসের মধ্যে অগ্রিম কর সমন্বয় করে ব্যবসায়ীদের ফেরত দেওয়ার বিধান করা উচিত। করোনার প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা অর্থ উদ্যোক্তাদের ফেরত দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে এলপিজি খাতে খুচরা বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ মূসক প্রত্যাহার করে ট্যারিফ মূল্য চালু করা উচিত। সিলিন্ডারের কাঁচামাল আমদানিতে করভার থাকায় প্রস্তুত সিলিন্ডার বিক্রির ওপর থেকে মূসক তুলে নেওয়া দরকার। শিল্প খাতে করভার পুনর্বিন্যাস করা হলে অর্থনীতি গতি পাবে।

এ ছাড়া বর্তমান বাস্তবতায় মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এক অঙ্কে নামিয়ে আনা দরকার। এক অঙ্কে নামিয়ে আনলে খাত অনুযায়ী বিভিন্ন হারে মূল্য সংযোজন করহার করলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়বে বলে বিশ্বাস করি। আমরা বারবার বলে আসছি, করের আওতা বাড়ানো দরকার। দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। গ্রামীণ অর্থনীতিও এখন আগের চেয়ে অনেক মজবুত। উপজেলা পর্যায়েও সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর কর আরোপ করা উচিত। করের আওতা বাড়ানো হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। তাতে যাঁরা নিয়মিত কর দেন, তাঁদের ওপর থেকে করের চাপ কমবে।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাই এটি সহজ করা উচিত। আগামী বাজেটে আমরা এটির সহজ সমাধান চাই।

বন্দর সম্প্রসারণ নিয়ে বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা থাকবে বলে আশা করছি। কারণ, বন্দরসুবিধা না বাড়লে শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও তৈরি পণ্য রপ্তানিতে আমরা পিছিয়ে যাব। সরকার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পায়রায়ও টার্মিনাল নির্মিত হচ্ছে। এসব প্রকল্প চালু হতে সময় লাগবে। স্বল্পমেয়াদি প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টার্মিনাল হয়তো এ বছর আলোর মুখ দেখবে। আমদানি-রপ্তানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে পতেঙ্গা টার্মিনালও খুব বেশি দিন চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। তার আগেই নতুন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আমরা চাই, চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারিত বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ নির্দেশনা। এ প্রকল্প চালু হলে সহজে দেশের নানা স্থানের কারখানায় কাঁচামাল যেমন নেওয়া যাবে, তেমনি পণ্য রপ্তানিও সহজে করা যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা কম থাকায় পণ্য আমদানির চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রায়ই জটের মুখে পড়তে হচ্ছে আমদানি পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে। বড় প্রকল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় জেটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। তাতে শিল্পকারখানার কাঁচামাল আমদানি সহজ হবে।