খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা থাকলে এসডিজি বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছেছে। দেশেও প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়তি। এতে উন্নয়নশীল দেশের নিম্ন আয়ের মানুষেরা বিপাকে পড়েছেন। খাদ্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে এসডিজি বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়বে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

আজ ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইডিআরও), দৈনিক বণিক বার্তা ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
খাদ্যনিরাপত্তার সঙ্গে কেবল ক্ষুধামুক্তি নয়, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের সম্পর্ক আছে। এসডিজির ১৭টি অভীষ্টের মধ্যে ১, ২, ৩, ৬, ৭, ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ নম্বর অভীষ্টের সঙ্গে টেকসই খাদ্যব্যবস্থার সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া ৪, ৫, ৮, ৯, ১০, ১১, ১৬ ও ১৭ নম্বর অভীষ্ট অর্জনের অগ্রগতিতে টেকসই খাদ্যব্যবস্থার প্রভাব আছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সামসুল আলম কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে জোর দেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশি কৃষকেরা অন্যান্য ফসলের তুলনায় ধান উৎপাদনে বেশি আগ্রহী। এখন কৃষিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে। তবে কোভিড-১৯-এর সময় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে আছে।
সামসুল আলমের মত, কৃষির উন্নয়নে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাণিজ্যিক কৃষিতে জোর দিয়ে তিনি বলেন, ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার তুলনায় বাংলাদেশ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও কৃষিব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি উন্নয়নে তিনি গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব দেন।

সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক খাদ্য নীতি ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো সুরেশ বাবু। তিনি বলেন, করোনা মহামারির সময় বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তিনি টেকসই খাদ্য উৎপাদনে গুরুত্বারোপ করে বলেন, টেকসই খাদ্য উৎপাদন শুধু ক্ষুধাই দূর করে না, বরং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও সাহায্য করে। টেকসই খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খাদ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এখন পুষ্টি নিশ্চিত করার সময় হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। বাংলাদেশে প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন অপুষ্টির শিকার। ৫ বছরের কম বয়সী ৩৬ শতাংশ খর্বকায় (উচ্চতা কম), ৩৩ শতাংশ কৃশকায় (ওজন কম)। জন্মের সময় শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলে তারা খর্বাকৃতি ও কৃশকায় হয়ে বেড়ে ওঠে, অনেক শিশুর অকালমৃত্যু ঘটে। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু জন্মের হার একটা সময় কমতে শুরু করেছিল, কিন্তু এখন তা আবার বাড়ছে বলে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে।

দেশে প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও পুষ্টিমান বাড়েনি। এই পরিস্থিতি জাতীয় অর্থনীতির আরও বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ, অপুষ্টির শিকার মানুষের ভারে সার্বিক উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইডিআরও) কার্যনির্বাহী পরিচালক তানজিল হোসেন। প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফপিআরআইয়ের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর আক্তার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. সাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী প্রমুখ।