‘গাছে উঠিয়ে’ ভ্যাটের চাপ

জমি ইজারা নেওয়ার পর এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে ভ্যাট দাবি করছে সরকার, যা চুক্তিতে ছিল না

ভ্যাট

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি ও ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম বলেন, ‘বিজিএমইএর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার ডিবিএলের পক্ষ থেকেও চিঠি দিয়েছি। আমরা বলেছি, আমাদের পক্ষে এ ভ্যাট দেওয়া সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ইজারার চুক্তি করেছি, তখন ভ্যাটের বিষয়টি ছিল না। এখন সেটা চাওয়া হচ্ছে।’
বেজা সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল মিলিয়ে ১৯২টি প্রতিষ্ঠানকে জমি দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে ২ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল, মহেশখালী অর্থনৈতিক অঞ্চল (ধলঘাটা), জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে মোট ৮৩টি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে ইতিমধ্যে জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে অথবা ইজারার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সংগঠন বা সংস্থা জমি নিয়ে আবার তার সদস্য বা অন্য বিনিয়োগকারীদের জমি দিচ্ছে। যেমন বিজিএমইএ ৫০০ একর জমি নিয়ে ৭৪টি কারখানাকে বরাদ্দ দিচ্ছে।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এক একর জমির ৫০ বছরের ইজারামূল্য পড়েছে ১ কোটি টাকা, যার ওপর ভ্যাট চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। এভাবে ৫০০ একর জমির ইজারামূল্য দাঁড়ায় ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ভ্যাট দিতে হবে ৭৫ কোটি টাকা।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা একটি সমিতি গঠন করেছে, যা এখনো নিবন্ধিত হয়নি। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন নামের এই সংগঠনের সহসভাপতি ও স্টার অ্যালাইড কনসোর্টিয়ামের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন বিনিয়োগকারী বিদ্যমান অবস্থা দেখে, পর্যালোচনা করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। বিনিয়োগ করার পর নিয়ম পাল্টানোর কাজটি অন্য কোথাও করা হয় না।’ তিনি বলেন, ‘ভ্যাট আমরা দিতে রাজি নই। এটা চুক্তিতে ছিল না।’

বেজা সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে জমি বরাদ্দ দিয়ে বেজা ইজারামূল্য বাবদ যে অর্থ পেয়েছে, তার ওপর ভ্যাট হিসাব করলে ৩০৫ কোটি টাকা দাঁড়ায়।

বেজাও চায় না জমির ইজারামূল্যে ভ্যাট থাকুক। সংগঠনটি ভ্যাট প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়ে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। সর্বশেষ চিঠি দেওয়া হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়, বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া দরকার। এ জন্য ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ভ্যাট অব্যাহতির ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানায় সংস্থাটি।
বেজা সূত্র জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে জমি বরাদ্দ দিয়ে বেজা ইজারামূল্য বাবদ যে অর্থ পেয়েছে, তার ওপর ভ্যাট হিসাব করলে ৩০৫ কোটি টাকা দাঁড়ায়। ফলে বার্ষিক হিসাবে সরকারকে খুব বেশি রাজস্ব হারাতে হবে না।
জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’


কাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বেজার গভর্নিং বোর্ডের সপ্তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিষয়টি আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য নীতির ধারাবাহিকতা খুবই জরুরি বিষয়। কারণ একজন বিনিয়োগকারী ব্যয় ও মুনাফার সম্ভাবনা পর্যালোচনা করার পর বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। কোনো দেশে হঠাৎ হঠাৎ নীতির পরিবর্তন হলে বিনিয়োগকারীদের সন্দেহ তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, কোথাও পরিবর্তন জরুরি হলে আগাম আলোচনা ও সময় দেওয়া দরকার। চটজলদি সিদ্ধান্ত ও প্রত্যাহার ঠিক নয়।