চলতি অর্থবছরে ৪০ লাখ ফ্রিজ বিক্রি করতে চাই

দেশীয় ফ্রিজের বাজারের সিংহভাগই এখন ওয়ালটনের দখলে। দেশের ফ্রিজের বর্তমান বাজার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মুর্শেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফয়জুল্লাহ

গোলাম মুর্শেদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সম্প্রতি আপনারা বিদেশি কম্প্রেসর ব্র্যান্ড কিনেছেন। কোন পরিকল্পনা থেকে এ বিনিয়োগ?

গোলাম মুর্শেদ: ফ্রিজের হৃৎপিণ্ড হচ্ছে কম্প্রেসর। এটা ছাড়া ফ্রিজ অসম্ভব। দেশে ফ্রিজের বাজার দিন দিন বড় হচ্ছে। এখন কম্প্রেসর তো কাউকে না কাউকে বানাতে হবে। আমরা এর আগে অস্ট্রিয়ায় একটা কম্প্রেসর প্ল্যান্ট কিনেছিলাম। এবার আরও তিনটি ইতালিয়ান ব্র্যান্ড—জানুসি, ভারডিকটর ও এসিসি কিনেছি। দেশে তৈরি উন্নত মানের ফ্রিজ, ইউরোপসহ বিদেশের বাজারে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত ফ্রিজে ইনভার্টার প্রযুক্তির এসব কম্প্রেসর ব্যবহার করা হবে। আমরা ফ্রিজের বাজার বড় করার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ জন্য এ বিনিয়োগ করা হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশে ফ্রিজের বাজারটা এখন কেমন?

গোলাম মুর্শেদ: দেশে ফ্রিজের বাজার এখন বেশ বড়। বলতে গেলে বছরে ৫০ লাখের মতো ফ্রিজ বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২ লাখের মতো আমরাই বিক্রি করে থাকি। প্রায় ৭০ শতাংশ বাজার আমাদের দখলে। আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা আছে ৪৫ লাখ। তবে আমরা যেহেতু আরও বড় পরিসরে ফ্রিজের বাজার ধরতে চাই, এ জন্য চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪০ লাখ ফ্রিজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। এখন পর্যন্ত বিক্রির যে ধরন তাতে আশা করছি, লক্ষ্য অর্জিত হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নতুন কম্প্রেসর ব্র্যান্ডগুলো কেনার পর আপনাদের সক্ষমতা কেমন বাড়বে?

গোলাম মুর্শেদ: আমাদের অস্ট্রিয়ার কম্প্রেসর কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা আছে ১৬ লাখ। এবার ইতালির যে তিনটা ব্র্যান্ড যুক্ত হলো, এখানে বার্ষিক উৎপাদন হবে আরও ৩২ লাখ কম্প্রেসর। তবে এই দুই কারখানা মিলে আমরা বছরে ৫০ লাখ কম্প্রেসর উৎপাদন করতে পারব। দেশে নিজেদের জন্য ব্যবহার করার পর বাকিটা রপ্তানি করব। ইউরোপের বাজারে ইতালির এই তিন কম্প্রেসর ব্র্যান্ডের যে ক্রেতারা ছিলেন, আশা করি, তাঁরা এখন আমাদের পণ্য কিনবেন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: এখন ওয়ালটন পণ্যের রপ্তানি বাজার কেমন?

গোলাম মুর্শেদ: ওয়ালটনের পণ্য এখন বিশ্বের ৪০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে গত ৬-৭ মাসে ১০টি দেশ নতুন করে যুক্ত হয়েছে। করোনার সময় থেকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। এখন রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২০০ শতাংশের বেশি। তবে এ হারে প্রবৃদ্ধি সব সময় হবে না। কারণ, যেহেতু ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানি মাত্র শুরু, সুতরাং আগামী ১০ বছর এমন প্রবৃদ্ধি হবে। তারপর এটা কমে এসে একটা জায়গায় দাঁড়াবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: দেশের বাজারে ওয়ালটন শক্তিশালী ব্র্যান্ড। ফ্রিজের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ সাফল্যের কারণ কী?

গোলাম মুর্শেদ: এটার পেছনে অন্যতম কারণ অদম্য ইচ্ছা। ওয়ালটন যাঁরা শুরু করেছিলেন, তাঁরা দেশীয় একটা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় নিরলস পরিশ্রম করেছেন। কম দামে মানুষকে ভালো মানের পণ্য দিয়েছেন। ফলে ওয়ালটন আজকের এই অবস্থানে এসেছে। এ ছাড়া সরকারের শিল্পবান্ধব নীতি ও শতভাগ বিদ্যুতায়নের মতো বিষয়গুলো এ অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করেছে। এখনো সরকার ইলেকট্রনিকস শিল্পের জন্য নীতিসহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে এ শিল্প ভবিষ্যতে আরও ভালো করবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ওয়ালটনের পণ্য বাংলাদেশে তৈরি। এটা এ দেশের পণ্য। এ বিষয়গুলো কি মানুষকে ওয়ালটনের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করে?

গোলাম মুর্শেদ: সেটা তো অবশ্যই। ওয়ালটন এ দেশের ব্র্যান্ড বলেই মানুষ এটিকে চিনেছে। তবে এটা এখন আর বলতে হয় না। এখন মানুষ ব্র্যান্ড হিসেবেই আমাদের পণ্য কেনে। ভালো মানের পণ্য তুলনামূলক কম দামে আমরা দিতে পারছি। যে কারণে মানুষ আমাদের পণ্য কিনছে। এ ছাড়া মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফ্রিজের মতো পণ্যকে এখন আর মানুষ বিলাসিতা মনে করে না। এটা এখন মানুষের প্রতিদিনকার প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ওয়ালটনের ফ্রিজ আরও কম দামে দেওয়া সম্ভব কি?

গোলাম মুর্শেদ: আমাদের ফ্রিজের এখন যে দাম, তার চেয়ে কম দামে দেওয়া সম্ভব নয়। দাম আরও কমাতে গেলে তখন পণ্যের মানের সঙ্গে আপস করতে হবে। তাতে সেটা আর ওয়ালটন থাকবে না। সেটা হবে অন্য কিছু। মানুষ সেটাকে ওয়ালটনের পণ্য বলবে না। বরং আমরা এখন যেটা চিন্তা করছি, উন্নত মানের বেশি দামের পণ্য বাজারে আনব। এ জন্য বিদেশি কম্প্রেসর ব্র্যান্ড কিনেছি, যাতে আরও মানসম্পন্ন ফ্রিজ তৈরি করতে পারি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওয়ালটনের ফ্রিজ পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমরা নগরীর অভিজাত পরিবারেও ওয়ালটনের পণ্য পৌঁছাতে চাই।