চলতি বছরের মধ্যে শীর্ষ টাইলস উৎপাদক প্রতিষ্ঠান হবে আকিজ

সিরামিক টাইলসের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আকিজ সিরামিকসের পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্র বাণিজ্য প্রতিবেদক।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম, পরিচালক (বিক্রয় ও বিপণন) আকিজ সিরামিকস
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আকিজ গ্রুপ টাইলসের ব্যবসায় কবে যুক্ত হলো? এ ব্যবসা এখন কেমন চলছে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: ২০১২ সালে আকিজ গ্রুপ টাইলসের ব্যবসায় যুক্ত হয়। আমরা ২০ হাজার বর্গমিটার টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা নিয়ে শুরু করেছিলাম। এখন প্রতিদিন ৪৯ হাজার ৫০০ বর্গমিটার টাইলস উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। আগামী মাসে একটা নতুন লাইন যুক্ত হবে। এতে প্রতিদিন উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ৬৭ হাজার বর্গমিটারে। ফলে আগামী মার্চ শেষে উৎপাদন ক্ষমতার বিবেচনায় আকিজ সিরামিক হবে দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি নতুন আরেকটি লাইন যুক্ত হবে। তখন আমাদের প্রতিদিনের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে এক লাখ বর্গমিটার হবে। আর বিক্রির হিসাবে আকিজ সিরামিকস দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যে বিক্রির দিক থেকে দেশে আমরা শীর্ষস্থানে উঠতে পারব। আবার ব্র্যান্ডের বিবেচনায় আকিজ সিরামিকস গত তিন বছর শীর্ষে রয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি টাইলসের রপ্তানি বাজারও রয়েছে। রপ্তানি বাজারের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: যেসব প্রতিষ্ঠান টাইলস রপ্তানি করছে, তাদের মাধ্যমে শুধু রপ্তানিকারকের তালিকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম উঠেছে। খুব বেশি রপ্তানি আয় হচ্ছে না। অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করলে বিদেশে টাইলস রপ্তানি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ, টাইলসের কাঁচামালের ৯৫ শতাংশই বিদেশ থেকে আসে। যে শুল্ক কর দিয়ে কাঁচামাল আনতে হয়,এরপর তৈরি করে তা বিদেশে পাঠাতে গেলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে বিশ্ববাজারে চীনের সঙ্গে কোনোভাবেই প্রতিযোগিতায় টেকা সম্ভব না। চীন যে টাইলস আড়াই ডলারে দিতে পারে, আমাদের সেই টাইলস তৈরিতে খরচ হয় পাঁচ ডলারের বেশি। তাই বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে এত দামে পণ্য নেবে না। সরকার রপ্তানিতে প্রণোদনা বাড়ালে এবং কাঁচামাল আমদানিতে কর কমালে প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানিতে আগ্রহী হবে। তবে আকিজের তৈজসপত্র ইউরোপের বাজার, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে রপ্তানি শুরু হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: টাইলসের কাঁচামাল প্রায় পুরোটাই বিদেশ থেকে আসে। এখন তো পরিবহন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তার প্রভাব কতটা পড়েছে।

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: করোনা শুরুর পর টাইলস উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে আমরা সে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়িনি। আবার বিশ্ববাজারে টাইলসের কাঁচামালের দাম ৩০-৩৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া বেড়ে চার হাজার মার্কিন ডলার হয়েছে। এটা আমাদের উৎপাদন খরচের ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে। তবে খরচ যেভাবে বেড়েছে, সেই তুলনায় টাইলসের দাম বাড়েনি। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান মুনাফায় ছিল, তাদের মুনাফা কমেছে। আর যাদের লাভ-লোকসান প্রায় সমান ছিল, তারা লোকসানে চলে গেছে। জাহাজ ভাড়া যেভাবে বেড়ে গেছে, এটা সহসা কমবে না। তাই সামনে টাইলসের দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, দাম না বাড়ালে বাজারে টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সরকারের পক্ষ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর একটা প্রস্তাব আছে। টাইলসের বাজারে এর প্রভাব কী হবে?

মোহাম্মদ খোরশেদ আলম: গ্যাসের দাম বাড়লে খরচ বেড়ে যাবে। আর সরকার যদি গ্যাস নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না করে, তাহলে গ্যাসনির্ভর সব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় কয়েক মাস ধরে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কমে গেছে। যেহেতু আমাদের গ্যাসের মজুত তেমন নেই, তাই এলএনজির জন্য ভালো একটা উৎস বের করতে হবে।