চেক নিষ্পত্তিতে গ্রাহক সম্মতিপত্র চাওয়া আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক
ক্রস চেক নিষ্পত্তি করতে ‘গ্রাহক সম্মতিপত্র’ চাওয়া বিনিময়যোগ্য বা ‘নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট’ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ ব্যাংক বছর দুয়েক ধরে স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের মাধ্যমে দ্রুত চেক নিষ্পত্তির যে তোড়জোড় করেছে তাও অনেকখানি ম্লান হয়ে পড়বে নতুন এই বিধানের ফলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২৬ নভেম্বর এক নির্দেশে ব্যাংকগুলোকে বলেছে, সব করপোরেট বা মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের এক লাখ ও তার চেয়ে বেশি এবং ব্যক্তি হিসাবের বিপরীতে পাঁচ লাখ ও তার চেয়ে বেশি মূল্যমানের চেক পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহকের সম্মতিপত্র আবশ্যিকভাবে গ্রহণ ও এ সংক্রান্ত রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, পেয়িং ব্যাংক অর্থাৎ গ্রাহক যে ব্যাংকের চেকটি দিল সেই ব্যাংকের কাছ থেকে গ্রাহক সম্মতিপত্রবিহীন চেক ‘পরামর্শ পাওয়া যায়নি’ কারণ দেখিয়ে ফেরত দেওয়া যাবে।
জাল চেক মুদ্রণ, স্বাক্ষর জালিয়াতি, চেকের মূল্যমান বা গ্রাহকের নাম বা এমআইসিআর লাইন প্রভৃতি ঘষামাজা ও পরিবর্তনের মাধ্যমে যেকোনোরূপ জালিয়াতির আশঙ্কা রোধকল্পে বাংলাদেশ ব্যাংক এই নির্দেশ দিয়েছে বলে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।
নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্ট আইন অনুসারে চেক হচ্ছে টাকার অনুরূপ বিনিময়যোগ্য উপকরণ। কেউ ক্রস চেক দিলে তা নিজ ব্যাংকে জমা করে সংগ্রহ করা হয়। এখন কেউ ক্রস চেক দেওয়ার পর তা আবার গ্রাহকের ব্যাংকের মাধ্যমে সম্মতিপত্র নেওয়ার অর্থ হচ্ছে একটা বাঁধ তৈরি করা। এতে অহেতুক সময়ক্ষেপণ হবে এবং এর একটা খরচও আছে, যা বিশেষত ব্যবসায়ীদের বহন করতে হবে। উপরন্তু, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যিনি চেক দিচ্ছেন তাঁর পক্ষে আবার নিজ ব্যাংকে গিয়ে সম্মতিপত্র দেওয়াও বাস্তবসম্মত হবে না।
আবার যদি কোনো গ্রাহক সম্মতিপত্র না দেন এবং ব্যাংক ‘পরামর্শ পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে চেক ফেরত দেন, তাহলে অপর পক্ষের গ্রাহক অর্থাৎ যিনি টাকাটা পেতেন, তিনি আইনি কোনো ব্যবস্থা নিতেও পারবেন না। কিন্তু, আইন অনুসারে চেক ফেরত বা বাউঞ্চ হলে মামলা করতে পারেন যিনি টাকাটা পাবেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবীর। যোগাযোগ করা হলে তিনি গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, নানা ধরনের জাল-জালিয়াতি করে এমআইসিআর চেকও হুবহু তৈরি করা হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, অনলাইনে টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে একটা এসএমএস বা খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু অভিযোগ আসছে সিম খোয়া গেছে। নতুন সিম তোলার আগেই টাকা তুলেও নেওয়া হচ্ছে। আবার সব সিমের নিবন্ধনের কথা বলা হলেও এখনো সব সিম নিবন্ধিত নয়। ফলে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের নানা ধরনের প্রতিরোধব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।
তবে হুমায়ুন কবীর এও বলেন যে তাঁদের নির্দেশ আইন নয়, বিধি। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যদি দেখা যায় এতে বেশি জটিলতা তৈরি হয়েছে সে ক্ষেত্রে নির্দেশনাটি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে।’
নেগোশিয়েবল ইন্সট্রুমেন্টের সঙ্গে বিধিটি সাংঘর্ষিক কি না, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এই আইনও সংশোধনের বিবেচনায় আছে। সেখানেও প্রয়োজনীয় কিছু কিছু বিষয় সংশোধন করার কথা তাঁদের ভাবনাতে আছে।