নতুন বেতনকাঠামো অনুমোদনের জন্য সোমবার মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠছে
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলই করা হচ্ছে!
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অষ্টম বেতনকাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পদ্ধতি শেষ পর্যন্ত রাখা হচ্ছে না। আগামী সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যে প্রস্তাব মন্ত্রিসভা কমিটিতে উঠছে, তাতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের কথাই বলা আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শুধু বেতন দেওয়া হবে, ভাতাসহ অন্য সুবিধা দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। এর আগে সপ্তম বেতনকাঠামোও কয়েক ধাপেই বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতাসহ সার্বিক বিষয়ে বরাদ্দ রাখা হয় ২৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর চেয়ে পাঁচ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা বাড়তি বরাদ্দ রাখা হয়েছে চলতি অর্থবছরের বাজেটে।
নতুন বেতনকাঠামোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে গঠিত জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদনে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের সুপারিশ করা হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার নেতৃত্বাধীন সচিব কমিটিও তা বহাল রাখে।
বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের কাজ করে মূলত অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ। এ বিভাগ যাবতীয় কাজ শেষ করার পরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য খসড়া তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল সোমবার সচিবালয়ে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের শুধু বলেন, ‘আগামী সোমবার নতুন বেতনকাঠামো অনুমোদনের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উঠবে।’ বেতনকাঠামোর অন্য কোনো দিক নিয়ে তিনি গতকাল আর কিছু বলেননি।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল ঠেকাতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাই সোচ্চার নন, বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তাঁরা বলছেন, পদোন্নতির সময় হলেও ঠিক সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি হয় না। এ জন্য পদোন্নতির নির্ধারিত সময় থেকে আর্থিক সুবিধা হিসেবে সিলেকশন গ্রেড দেওয়া হয়। আবার চাকরির একটি নির্ধারিত সময় অনুযায়ী টাইম স্কেল দেওয়া হয় তাঁদের।
২৪তম বিসিএসের একজন সিনিয়র সহকারী সচিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেখা গেল, উপসচিব হওয়ার উপযুক্ত সময়ও আমাকে উপসচিব করা হলো না। বতর্মান নিয়ম বহাল থাকলে আমি সিলেকশন গ্রেড পেতাম এবং পদোন্নতি বঞ্চিত থাকলেও আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারতাম।’
অন্যদিকে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পদোন্নতি হোক বা না হোক, নতুন কাঠামোতে পাঁচ বছর পরপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতনভাতা বৃদ্ধির একটি ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বিরোধিতাকারীরা না বুঝেই বিরোধিতা করছেন।
তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরাই হচ্ছে মোট সরকারি চাকরিজীবীর ৬০ শতাংশ। তাঁদের মধ্যে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডিপ্লোমা ফার্মাসিস্টসহ কিছু ব্লক পদ (পোস্ট) রয়েছে। এসব পদে পদোন্নতি পেয়ে ওপরে ওঠার সুযোগই নেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতির মহাসচিব লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই সরকার আগে পদোন্নতির ব্যবস্থা করুক, তারপর টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করুক।’
নতুন কাঠামোতে সর্বোচ্চ বেতন থাকছে ৭৫ হাজার টাকা ও সর্বনিম্ন আট হাজার ২৫০ টাকা। তবে মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্যসচিবের বেতন ৯০ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং সিনিয়র সচিবের বেতন ৮৪ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণার আগেই জানিয়ে রেখেছেন—যখনই ঘোষণা আসুক না কেন এ বছরের ১ জুলাই থেকে নতুন কাঠামোতে বেতন পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে—নতুন বেতনকাঠামো বাস্তবায়নে সেদিকটি বিবেচনায় রাখা হচ্ছে।