টিকফা বৈঠক এপ্রিলের মধ্যে

বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাতিল করেছিল বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদী যে এ ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে না।
তবে বাণিজ্যমন্ত্রীর ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’ মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।
সচিবালয়ে গতকাল রোববার বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত মার্শা বার্নিকাটের এক বৈঠকের পর পাশাপাশি বসে দুজনেই পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।
বৈঠকটি ছিল মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) আগামী বৈঠক পেছানো নিয়ে। বার্নিকাটকে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, নির্ধারিত তারিখ আগামী ১৩ ডিসেম্বর টিকফা বৈঠক হচ্ছে না। এটি হবে আগামী মার্চ বা এপ্রিলে কোনো সুবিধাজনক সময়ে।
বাংলাদেশের কোনো কোনো নেত্রী জিএসপির বিরোধিতা করেছিলেন বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, জিএসপির জন্য প্রায় সব শর্তই পূরণ করা হয়েছে। এটা না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আবার জিএসপি থেকে খুব যে লাভবান হওয়ার কিছু আছে, তা-ও নয়। এটা দেশের সম্মান। জিএসপি না থাকা সত্ত্বেও গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ৬২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, জিএসপি বাতিলে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে দ্বিমত পোষণ করেন বলে জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, টিকফার বৈঠক হয় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে। ইউএসটিআর একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার ব্যক্তি। বর্তমান ইউএসটিআর ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারে থাকবেন না। তাই টিকফা বৈঠক পেছাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সরকারের পরিবর্তন হলেও দেশটির নীতির পরিবর্তন খুব একটা হয় না। তবে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বাতিল করতে ইতিমধ্যে যে ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, তা একটি ভালো সংবাদ।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ক হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) টিপিপির বিষয়টা উত্থাপন করা হয়েছিল জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে ডব্লিউটিওর মূলনীতির পরিপন্থী হচ্ছে টিপিপি।’
যুক্তরাষ্ট্রসহ এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশ ২০১৫ সালে টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি সই করে। চুক্তিতে সদস্যদেশগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে শুল্ক না থাকার কথা উল্লেখ রয়েছে।
শ্রমিক অধিকার, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি ভালো চলছে বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, শ্রম অধিকার একটি অস্পষ্ট বিষয়। তবে রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বিভিন্ন কারখানায় গেলে শ্রমিকেরা জানান যে তাঁরা ভালো আছেন। কারখানার কর্মপরিবেশও ভালো।
মার্শা বার্নিকাট বলেন, টিকফা বৈঠকে উভয় দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে সংলাপ হয়। জিএসপি হলো টিকফার সংলাপের একটি বিষয় মাত্র। জিএসপি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গা টিকফার বৈঠক নয়।