ডিসেম্বরের মধ্যে ট্যানারি সরবে

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সব ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তর শেষ হবে। ট্যানারি শিল্প মালিক সমিতির নেতাদের বরাত দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।
চামড়া শিল্পনগরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সভায় মালিক সমিতির নেতারা ডিসেম্বরের মধ্যে ট্যানারি স্থানান্তর করে চামড়া শিল্পনগরে পুরোদমে উৎপাদনকাজ শুরু করা যাবে বলে জানান। শিল্প মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তিটি পাঠিয়েছে গতকাল রোববার।
সভায় শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন। এতে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ), বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএলএলএফইএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানতে চাইলে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে হাজারীবাগে আর কাঁচা চামড়া নেব না। এতে ট্যানারিগুলোর ওপর কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়বে, তবে মালিকেরাও তাড়াতাড়ি সাভারে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।’
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ১৫৫টি ট্যানারিকে সাভারে সরিয়ে নিতে প্রায় ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০০৩ সালে। তবে নানা কারণে ট্যানারি সরানো যায়নি। ট্যানারি-মালিকদের অভিযোগ, সরকার যথাসময়ে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারেনি। অন্যদিকে বিসিক বিলম্বে সরানোর জন্য ট্যানারি মালিকদের দায়ী করছে। গত ১৮ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ট্যানারিগুলোকে সরাতে বিলম্বের জন্য প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন। কয়েক মাস আগে পাঁচটি পরিবেশবাদী সংগঠন চামড়া শিল্পনগর পরিদর্শন করে ট্যানারিগুলোকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার তাগিদ দেয়। শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু অক্টোবর মাসে চামড়া শিল্পনগর পরিদর্শন করে ট্যানারিগুলোকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সভায় চামড়া শিল্পনগরের পরিস্থিতিও তুলে ধরা হয়। সভার বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চামড়া শিল্পনগরে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) দুটি মডিউল চালু রয়েছে। এর ফলে ইতিমধ্যে ২৪টি ট্যানারি কারখানা চামড়া উৎপাদনকাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি ৫০টি ট্যানারি কারখানা চামড়া শোধনের জন্য ড্রাম স্থাপন করেছে। ইতিমধ্যে ১২৯টি ট্যানারি কারখানায় স্থায়ী বিদ্যুৎ-সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এদের প্রতিটির অনুকূলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ডিমান্ড নোট ইস্যু করেছে। এর মধ্যে ৬০টি ট্যানারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ডিমান্ড নোটের টাকা জমা দিয়েছে। কারখানা চালুর জন্য ২৫টি ট্যানারি স্থায়ী বিদ্যুৎ-সংযোগ নিয়েছে।
বৈঠকে শিল্পসচিব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে চামড়া শিল্পনগরে উৎপাদন শুরুর জন্য ট্যানারি মালিকদের নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, জনস্বার্থে সরকার ট্যানারি স্থানান্তর ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ছাড় দেবে না।