থাকা-খাওয়াতেই ৭২% ব্যয়

.
.

পোশাকশ্রমিক পরিবারকে খাবারের পেছনেই প্রতি মাসে গড়ে ৪ হাজার ৭৪৫ টাকা খরচ করতে হয়। যা ওই পরিবারের মাসিক খরচের ৪২ শতাংশ। আর ঘরভাড়া দিতে হয় ৩ হাজার ৩৯০ টাকা। অর্থাৎ খাবার ও ঘরভাড়ায় একজন পোশাকশ্রমিকের পরিবারকে গড়ে ৭২ শতাংশ খরচ করতে হয়।
সব মিলিয়ে পোশাকশ্রমিক পরিবারকে মাসে বাড়িভাড়া, খাবার, চিকিৎসাসহ মৌলিক চাহিদা মেটাতে ১১ হাজার ২৯৯ টাকা খরচ করতেই হয়। বাচ্চাদের শিক্ষা, প্রসাধনী, মোবাইল রিচার্জ, পোশাকের পেছনে তো খরচ আছেই। এ ছাড়া মাসে মাসে গ্রামের বাড়ি পাঠাতে হয় গড়ে ১ হাজার ২৪২ টাকা। একটি পরিবার প্রতিমাসে যা খরচ করে, এর ১১ শতাংশই গ্রামের পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠায়।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ইন বাংলাদেশ: সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অব দ্য গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি গত সপ্তাহে প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।
খাবার ও ঘরভাড়া দিতে গিয়ে পোশাকশ্রমিক পরিবারগুলোকে অন্য খাতে খরচ করতে হিমশিম খেতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও তা পূরণ হয় না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাচ্চাদের শিক্ষায় প্রতি মাসে ৬৬৭ টাকা খরচ করতে হয়। যা মোট খরচের মাত্র ৬ শতাংশের কাছাকাছি। আর প্রসাধনীতে মাত্র ২৯৯ টাকা খরচ করতে পারেন ওই পরিবারের সদস্যরা, যা মাসিক খরচের মাত্র আড়াই শতাংশ। চিকিৎসা বাবদ খরচ করতে হয় ৬০৪ টাকা বা মোট খরচের প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ।
তবে মোবাইল ফোনে রিচার্জ করতে পোশাকশ্রমিক পরিবারগুলো প্রতি মাসে গড়ে ৩১৬ টাকা খরচ করে। জামাকাপড় কেনাকাটা বা ছেঁড়াফাটা সেলাইয়ে তারা খরচ করে ৫২৬ টাকা।
শুধু খাওয়াদাওয়া, ঘরভাড়া—এসব খরচ করেই শেষ হয় না তাদের। আবার ৪০ শতাংশ পরিবারই প্রতি মাসে গড়ে ৩ হাজার টাকা তাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠায়। তবে ৭৫ শতাংশ পরিবারের ‘গ্রামের বাড়ি’ আছে, তারা বাস্তুহারা নয়। পোশাকশ্রমিক পরিবারগুলোর মূল স্থাবর সম্পদ বলতে বোঝায় টেলিভিশন, বৈদ্যুতিক পাখা ও স্বর্ণালংকার। ৬৮ শতাংশ পরিবারে টেলিভিশন রয়েছে। আর বৈদ্যুতিক পাখা আছে ৮৪ শতাংশের। ২৮ শতাংশ পরিবারে অল্প পরিমাণে হলেও স্বর্ণালংকার রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি পোশাকশ্রমিক পরিবারের মাসে গড় আয় ১৫ হাজার ৭২০ টাকা। তবে নিচের দিকে থাকা ১০ শতাংশ পরিবারের গড় আয় ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর প্রত্যেক পোশাকশ্রমিক পরিবারের গড় সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ১। অধিকাংশ পরিবারে দুজন করে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছেন। ৭৪ শতাংশ শ্রমিকই তাঁদের পরিবারের সঙ্গে বাস করেন। বাকিরা বন্ধু, সহকর্মীর সঙ্গে মেসে থাকেন।
পোশাকশিল্পের জন্য নারীদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ১০ ধরনের পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যসচেতনতাও বেশ ভালো। ৮৪ দশমিক ২ শতাংশ কারখানায় চিকিৎসক আছেন।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত ১৭৩টি তৈরি পোশাক কারখানার ১ হাজার ২০৪ পোশাকশ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এ গবেষণা করা হয়। যেসব কারখানা থেকে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে গড়ে ৯৫০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ৮৩ শতাংশ পোশাকশ্রমিক পড়তে পারেন। এর মধ্যে ৭১ শতাংশ পড়ার পাশাপাশি লিখতেও পারেন। মাত্র ১২ শতাংশ শ্রমিক নিরক্ষর।
এ বিষয়ে এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এ কে এনামুল হক বলেন, ‘নিবিড় জরিপে অনেক পোশাকশ্রমিকের অনেক নতুন তথ্য উঠে এসেছে। আবার ফলোআপ জরিপ করব। আমরা দেখতে চাই, সময়ের ব্যবধানে শ্রমিকদের কী কী ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে।’
সংখ্যা বিতর্ক: তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশই নারী—দীর্ঘদিন ধরেই এ দাবি করে আসছে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট বলছে, এ খাতে ৬৫ শতাংশ শ্রমিক নারী, বাকি ৩৫ শতাংশ পুরুষ শ্রমিক।
গত মাসে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্টার্নস সেন্টার ফর বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের এক গবেষণায় বলা হয়, পোশাকশ্রমিকদের ৫৬ শতাংশ নারী। ওই প্রতিবেদনটিকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
জানতে চাইলে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘নারী শ্রমিকের সংখ্যা এখনো ৭০ শতাংশের ওপরে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটি আগামী জুনে তথ্যভান্ডারের কাজ শেষ হলে জানা যাবে।’