দক্ষ লোকের অভাব এ শিল্পের বড় সমস্যা

দেশে ফ্রিজের বাজারের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহাঙ্গীর শাহ।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম আলো: বাংলাদেশে ফ্রিজের বাজারের বর্তমান অবস্থা কেমন?

আর এন পাল: বাংলাদেশে ফ্রিজের বাজার প্রতিদিনই বড় হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও সব মধ্যবিত্তের ঘরে ফ্রিজ ছিল না। এখন নিম্নমধ্যবিত্তের ঘরেও ফ্রিজ পৌঁছে গেছে। এটি এখন আর বিলাসী পণ্য নয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ২৫ লাখ ফ্রিজ বিক্রি হয়, যার প্রায় পুরোটাই দেশে তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ফ্রিজ তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। ওয়ালটন, ভিশনের মতো ব্র্যান্ড দেশেই ফ্রিজ উৎপাদন করছে। কম্প্রেসর ছাড়া বাকি সব যন্ত্রাংশ বা সামগ্রী এ দেশেই তৈরি হয়।

প্রথম আলো: ভোক্তার দিক থেকে এ দেশে ফ্রিজের চাহিদা কেমন?

আর এন পাল: আমাদের হিসাব বলছে, এ দেশে প্রতিবছর ৫০ লাখের মতো ফ্রিজের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দাম নাগালের মধ্যে না থাকায় অনেক পরিবার ইচ্ছে থাকলেও ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারছে না। এখন বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতিও বেশ ভালো। কারণ, দুই ঘণ্টা টানা বিদ্যুৎ না থাকলে ফ্রিজে রাখা পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হতে থাকে। তাই এখন অনেকেই ফ্রিজ কিনতে চান। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ফ্রিজের দাম রাখা গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছেও ফ্রিজ পৌঁছে দিতে পারব আমরা। নগর জীবনের নানা ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহের সাত দিন বাজার করে রান্না করার মতো অবস্থা নেই অনেক পরিবারের। এ কারণে তাদের জন্য ফ্রিজই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিজে রান্না করা খাবার যেমন সংরক্ষণ করতে পারে তারা। আবার বাজার-সদাই করে রাখতে পারে। এ ছাড়া বাসাবাড়ির বাইরে পাড়া-মহল্লার দোকানপাটেও ফ্রিজের ব্যবহার বাড়ছে।

প্রথম আলো: বর্তমানে এ শিল্প কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়?

আর এন পাল: বর্তমানে দক্ষ লোকের অভাব এ শিল্পের বড় সমস্যা। দক্ষ লোকের সংকটে এ খাতে মানসম্পন্ন ফ্রিজ বানানোর কাজ বিঘ্নিত হয়। যেমন কপার ঠিকমতো লাগানো না হলে ভালোমতো কাজ করে না ফ্রিজ। আবার ফ্রিজের জন্য যে ধরনের লোক দরকার, সেই ধরনের দক্ষ লোক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারছে না। তাই আমাদের কর্মীদের চাকরিকালীন প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। ফ্রিজশিল্পের জন্য প্রতিবছর ১০ হাজার দক্ষ লোক দরকার। এ খাতের আরেকটি সমস্যা হলো কাঁচামালের শুল্ক-কর বেশি। স্থানীয় পর্যায়ে যদি এসব উপাদান সংগ্রহ করা যেত, তাহলে উৎপাদন খরচ কমত।

প্রথম আলো: আপনাদের ভিশন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ কেন ক্রেতারা কিনবেন? এ ফ্রিজের বিশেষত্ব কী?

আর এন পাল: দেশের মানুষের কাছে আরএফএল গ্রুপের সুনাম আছে। আরএফএলের পণ্যের মান ভালো, দেখতে নজরকাড়া। এ ছাড়া বিক্রি–পরবর্তী সেবা দেওয়া হয়। সারা দেশে ভিশন এম্পোরিয়াম নামে ২৮০টি আউটলেট আছে। এসব আউটলেটে গিয়ে গ্রাহকেরা ফ্রিজ দেখে-বুঝে কিনতে পারেন। এ ছাড়া দেশজুড়ে আমাদের দুই হাজার পরিবেশক আছে।

ফ্রিজের মূল্যের ২০-২৫ শতাংশ পরিশোধ করেই আপনি তা কিনতে পারবেন। বাকি টাকা কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ আছে। এর মানে কেনার সময় গড়ে পাঁচ হাজার টাকা জমা দিলেই ফ্রিজ গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে যাবে। বর্তমানে সাড়ে ১২ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিশন ব্র্যান্ডের ফ্রিজ পাওয়া যাচ্ছে। ৫০ লিটার থেকে ৫৬৬ লিটার ধারণক্ষমতার ফ্রিজ আছে আমাদের শোরুমগুলোয়।