দিনভর অবস্থান, রাতে শূন্য হাতে ফিরলেন দুই কারখানার শ্রমিক

ফাইল ছবি

বকেয়া মজুরির দাবিতে গাজীপুরের একই মালিকের স্টাইলক্র্যাফট লিমিটেড ও ইয়ংওয়ান বিডি লিমিটেডের কয়েক শ শ্রমিক রোববার উত্তরায় তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পরে বিজিএমইএ নেতাদের আশ্বাসে রাত ৯টার দিকে অবস্থান প্রত্যাহার করেন শ্রমিকেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার সকাল ৯টার পর স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ানের শ্রমিকেরা গাজীপুর থেকে বকেয়া মজুরির দাবিতে বিজিএমইএর উত্তরা কার্যালয়ে আসেন। তারপর সারা দিন তাঁরা সেখানে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা দাবি আদায়ে সারা রাত অবস্থান নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেন। রান্নার জন্য চুলা খুঁড়তে থাকেন কয়েকজন শ্রমিক।

পরে বিজিএমইএর কর্মকর্তারা সমস্যার সমাধানে দু-তিন দিন সময় চেয়ে শ্রমিকদের অবস্থান তুলে নিতে আহ্বান জানান। কারখানার মালিকসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিকদের ২০ জনের প্রতিনিধির নাম দেওয়ার প্রস্তাব দেন তাঁরা। তারপরও শ্রমিকেরা রাতে অবস্থান কর্মসূচি চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে ঘটনাস্থলে থাকা শ্রমিকনেতাদের মধ্যস্থতায় অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেওয়া হয়।

স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান বিডি কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা চলছে। ঈদের আগেও বেতন–ভাতার দাবিতে এ দুই কারখানার শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে গাজীপুরের মেয়র প্রত্যেক শ্রমিককে ৫ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। দুটি কারখানায় ৪ হাজার ২০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

বিজিএমইএ কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া স্টাইলক্র্যাফটের কর্মচারী নজরুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘শ্রমিকেরা দুই মাসের মজুরি পান। আর কর্মচারীদের বেতন বকেয়া পড়েছে ৯ মাসের।’ রাত ৯টার দিকে তিনি জানান, ১১ আগস্ট গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের বিষয়ে বৈঠক হবে।

অবশ্য বিজিএমইএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা আন্দোলনরত শ্রমিকদের কাছে ২০ জন প্রতিনিধির তালিকা চেয়েছি। তাঁরা সোমবার তালিকা দেবেন। এর মধ্যে আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করব। বেতন-ভাতা পরিশোধে তাদের পরিকল্পনা জানার পর শ্রমিক প্রতিনিধিসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক হবে।’ ১১ আগস্ট গাজীপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠকের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

স্টাইলক্র্যাফট লিমিটেড পোশাকশিল্পের প্রথম দিককার প্রতিষ্ঠান। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কারখানা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি। স্টাইলক্র্যাফটের চেয়ারম্যান ওমর গোলাম রব্বানী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস আলমাস রহমান।

স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ান শ্রমিকদের আন্দোলনে বেশ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা সমর্থন দিয়ে যুক্ত রয়েছেন। তাদের একটি গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর জেলার সভাপতি জিয়াউল কবীর বলেন, ঈদের পর গত শনিবার (৭ আগস্ট) কারখানা খোলার কথা ছিল। তবে সেদিন শ্রমিকেরা এসে দেখেন, ২৪ আগস্ট পর্যন্ত কারখানা বন্ধ। তারপরই শ্রমিকেরা বিজিএমইএ কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচির পরিকল্পনা করেন।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারখানা দুটির মালিকপক্ষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু আদৌ সমাধানে পৌঁছাতে পারব কি না, জানি না। বিভিন্ন সময় আমরা বহু কারখানার মেশিনপত্র বিক্রি করে শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করেছি। কিন্তু স্টাইলক্র্যাফট পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্টাইলক্র্যাফট ও ইয়ংওয়ানের শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি বাবদ বকেয়া পাওনা ১২ কোটি টাকা। বোনাসসহ অন্যান্য পাওনা ধরলে সেটি ২০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। মালিকপক্ষ আপাতত ১২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তবে সেটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। টাকা ব্যবস্থা না হওয়ায় কারখানা ২৪ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে।

শ্রমিকেরা অবস্থান কর্মসূচি শেষে চলে যাওয়ার পর বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যার সমাধানে সোমবার আমরা কারখানা মালিকের সঙ্গে বৈঠক করব।’