সাক্ষাৎকার
দেশে বিশ্বমানের রড উৎপাদন করছে কেএসআরএম
দেশে রড উৎপাদনকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের একটি কেএসআরএম। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলসহ দেশের বেশ কিছু মেগা প্রকল্পে রড সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলছেন কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসুদ মিলাদ।
প্রশ্ন :
ইস্পাতের বাজার এখন কেমন?
শাহরিয়ার জাহান রাহাত: করোনার শুরুতে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ইস্পাত খাত ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিল। করোনা শুরুর ধাক্কায় গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ইস্পাত পণ্যের চাহিদা অস্বাভাবিক কমে গিয়েছিল। তাতে এ শিল্প আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হারায়। শুরুতে ধাক্কা খেলেও সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে ব্যবসা-বাণিজ্যের চাকা আবারও কিছুটা সচল হয়। সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজের গতি বাড়ে। বেসরকারি খাতেও নির্মাণকাজ শুরু হয়। তাতে চাহিদাও বাড়তে থাকে। দেশের বাজারে চাহিদা বাড়লেও গত বছরের নভেম্বরের পর থেকে বিশ্বজুড়ে কাঁচামালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক বাজারে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ইস্পাত শিল্পে এখনো অস্থিরতা চলছে।
প্রশ্ন :
ইস্পাত খাতের কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা এখন চাহিদার চেয়ে বেশি। এটা কীভাবে দেখছেন?
শাহরিয়ার জাহান: দেশে বছরে ইস্পাত পণ্যের চাহিদা প্রায় ৭০ লাখ টন। উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ টনের। মোট উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় বেশি হলেও মানসম্মত ইস্পাত পণ্যের উৎপাদন এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। কেএসআরএমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মানসম্মত ইস্পাত পণ্য রড উৎপাদন করছে। গ্রাহকেরা এখন অনেক সচেতন। এ জন্যই মানহীন পণ্যের বাজার সংকুচিত হচ্ছে।
প্রশ্ন :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের মতো বড় প্রকল্পে কোন ধরনের রড সরবরাহ করছেন আপনারা? এই ধরনের রডের বৈশিষ্ট্য কী।
শাহরিয়ার জাহান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্পে আমরা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চাহিদামতো (চায়না স্ট্যান্ডার্ড এইচআরবি ৪০০ই) রড সরবরাহ করছি। এই ধরনের রড অধিক ভূমিকম্প সহনশীল এবং আধুনিক ও বড় স্থাপনা নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। শুধু টানেলই নয়, বাংলাদেশের সব মেগা প্রকল্পে রড সরবরাহ করে আসছে কেএসআরএম। কেএসআরএম কারখানা একটি ‘কম্পোজিট স্টিল ফ্যাক্টরি’। এই ধরনের কারখানায় আমরা সরাসরি প্রাথমিক কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) থেকে রড উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে গুণগত মান বজায় রেখে বিশ্বমানের রড উৎপাদন করছি। কেএসআরএম এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের স্ট্যান্ডার্ডের রড বানাতে সক্ষম। দেশের মেগা প্রকল্পগুলো বিশ্বমানের প্রকল্প। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করেই এসব প্রকল্পে কেএসআরএম রড ব্যবহার করছেন। অর্থাৎ কেএসআরএম বিশ্বমানের রড উৎপাদন করছে।
প্রশ্ন :
বঙ্গবন্ধু টানেল হলে ইস্পাত খাতে চাহিদা কেমন বাড়বে?
শাহরিয়ার জাহান: বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বড় অংশ মূল শহরের সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে শহরের দক্ষিণাংশ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নগরায়ণ হবে, যা এই অঞ্চলে ইস্পাতের চাহিদা বাড়াবে। আবার দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরেও শিল্পকারখানা হচ্ছে। মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়ক হলে অবকাঠামো উন্নয়নের জোয়ার তৈরি হবে। এতে আগামী দিনে ইস্পাত পণ্যের চাহিদাও বাড়াবে।
প্রশ্ন :
ইস্পাতের কাঁচামাল আমদানিতে বন্দর সুবিধা এখন কেমন?
শাহরিয়ার জাহান: বন্দরের সেবার মান বাড়ছে। তবে যেভাবে আমদানি বাড়ছে তাতে জেটির সংখ্যা দ্রুত না বাড়ালে সামনে সেবার মান ধরে রাখা যাবে না। পণ্য আমদানির তুলনায় বন্দরে জেটির সংখ্যা কম। নতুন নতুন জেটি ও টার্মিনাল বাড়াতে হবে। নির্মাণাধীন পতেঙ্গা টার্মিনাল এ বছর চালু হওয়ার কথা। তবে কোনোভাবেই তা যেন পিছিয়ে না যায়। প্রস্তাবিত বে টার্মিনাল নির্মাণ শুরু করা দরকার। বে টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সর্বোচ্চ মাত্রায় বন্দর সুবিধা পাবেন ব্যবহারকারীরা।
প্রশ্ন :
বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের সম্ভাবনা কেমন?
শাহরিয়ার জাহান: দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের বৃহদাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এক দশক ধরে দেশে অবকাঠামো উন্নয়নের যে গতিসঞ্চার হয়েছে, তা আগে কখনো হয়নি। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সমুদ্র ও বিমানবন্দর, বৃহৎ বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এক শটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনেকগুলো এখন দৃশ্যমান। শুধু বৃহদাকার প্রকল্পেই ইস্পাতের ব্যবহার বাড়ছে না, দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণেও ব্যক্তিখাতে ইস্পাতের ব্যবহার বাড়ছে। শহরের বাইরে গ্রামেও এখন পাকা ভবন হচ্ছে।
অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ইস্পাতের ব্যবহারও বাড়বে। অন্তত কয়েক দশক ধরে অবকাঠামো উন্নয়ন চলতেই থাকবে। তাতে আগামী দুই থেকে তিন দশক ইস্পাতের চাহিদা দিন দিন বাড়বে বলে আমাদের ধারণা।