দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন শেষের পথে

দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫-এর ল্যান্ডিং স্টেশনের উন্নয়নকাজ শেষের পথে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের গোড়া আমখোলা পাড়া গ্রামে প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, বাকি কাজ শেষ করে আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএসসিসিএলের প্রকল্প পরিচালক পারভেজ মনন আশরাফ বলেন, ১০ একর জমির ওপর ল্যান্ডিং স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালনা করার মূল ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্টেশনের বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র, জেনারেটর, ট্রান্সফরমার, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থাসহ সাবমেরিন কেব্লের যন্ত্রপাতি স্থাপন ও ডেটা সেন্টারের কাজও শেষ হয়েছে। আর সমুদ্র থেকে কেবল সংযোগ টানা, সঞ্চালন লাইন সংযুক্তির জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন, বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনের জন্য স্থাপিত ইলেকট্রিক্যাল পোস্টের কাজ শেষ পর্যায়ে।
সম্প্রতি প্রকল্প স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ডরমিটরি, নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যারাক, বিশ্রামাগার, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার কাজসহ কিছু অবকাঠামোর কাজ অসমাপ্ত রয়েছে।
প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯টি দেশের টেলিযোগাযোগ সংস্থার সম্মেলনে গঠিত সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের অধীনে জাপানের এনইসি ও ফ্রান্সের অ্যালকাটেল লুসেন্ট ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ এ কেব্লটি নির্মাণ করছে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে একটি ব্রাঞ্চ বা শাখা কেব্লের মাধ্যমে মূল কেব্লে বাংলাদেশ যুক্ত হবে। বর্তমানে কুয়াকাটা সৈকত থেকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরের সমুদ্রসৈকতে বাংলাদেশ অংশের সাবমেরিন কেব্ল চলে এসেছে। আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে কুয়াকাটার মূল স্টেশনে কেব্ল টানার কাজ শেষ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। এই সাবমেরিন কেব্লটিতে ১০০জি আলোক তরঙ্গের ডিডব্লিউএম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকার ১৬৬ কোটি টাকা ও বিএসসিসিএল ১৪২ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি ৩৫২ কোটি টাকা ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ঋণ হিসেবে দিচ্ছে। ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) অপারেটর হিসেবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) কুয়াকাটা থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্লের ব্যান্ডউইটথ পৌঁছানোর অপটিক্যাল ফাইবার ব্যাকহোল তৈরির কাজ করবে।
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজারের সাবমেরিন কেব্ল থেকে ২০০ জিবিপিএস (গিগা বিটস প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইটথ পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে আমরা ভারতে ব্যান্ডউইটথ রপ্তানি করছি। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্লটি চালু হয়ে গেলে ১ হাজার ৫০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইটথ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করবে বিএসসিসিএল। এর ফলে দেশীয় টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা কোম্পানিগুলোকে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইটথ কিনতে হবে না।’
মনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আগামী বছরে এ সাবমেরিন কেব্ল ল্যান্ডিং স্টেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৫ কেব্লের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এতে বরিশাল, যশোর, খুলনাসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ কম দামে ব্যান্ডউইটথ পাবে, ইন্টারনেটের গতিও বাড়বে।