আঞ্চলিক সংযোগ নিয়ে বিলিয়ার সিম্পোজিয়ামে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
দ্রুত লাভ দেখাতে না পারলে প্রশ্ন উঠবে
আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতায় বাংলাদেশের যোগ দেওয়া ঠিক হবে কি না, এ প্রশ্ন এখন আর নেই বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তবে তিনি বলেছেন, আঞ্চলিক সংযোগ বা কানেকটিভিটি থেকে দ্রুততার সঙ্গে লাভ দেখাতে না পারলে পুরোনো প্রশ্ন আবার জাগতে পারে।
আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) যে আঞ্চলিক সংযোগের রূপরেখা তৈরি করেছে, তাতে বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে আয়োজিত এক সিম্পোজিয়ামে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। রাজধানীতে গতকাল সোমবার নিজেদের কার্যালয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।
এতে প্রতিবেশী বড় শক্তি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো মাথায় রেখে কাজ করবে, আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাধা কী, যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে কত বিনিয়োগ লাগবে এবং তা থেকে আসবে ইত্যাদি নানা বিষয় আলোচনায় আসে। পাশাপাশি বিমসটেক গত ২০ বছরে আদৌ কিছু অর্জন করতে পেরেছে কি না, নতুন করে এ সংস্থাটি জোর পাচ্ছে কি না, এসব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
বিমসটেক ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সাত দেশের একটি সংস্থা। এই সংস্থার সদস্য বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও থাইল্যান্ড। এর সচিবালয় ঢাকায় অবস্থিত।
বিলিয়ার অনুষ্ঠানে একটি উপস্থাপনায় বিমসটেক সচিবালয়ের পরিচালক এস এম নাজমুল হাসান বলেন, বিমসটেক যে আঞ্চলিক সংযোগের কথা বলছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে ৮৬ শতাংশ। পাশাপাশি এ দেশের প্রকৃত আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। তিনি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রাক্কলনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, আঞ্চলিক সংযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ হাজার ৪২৭ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের অর্থায়নের আশ্বাস পাওয়া গেছে। বাকিটার অর্থায়ন অনিশ্চিত।
বিলিয়ার পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন এ অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থানকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপানের মতো বড় শক্তিগুলো বাংলাদেশে আসছে। এর পেছনে নিশ্চয়ই যৌক্তিক কারণ আছে। বাংলাদেশ কীভাবে চীন ও ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা করবে—এমন বিতর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সরিয়ে অন্য জায়গায় নেওয়া যাবে না। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই কাজ করতে হবে। তবে সাম্প্রতিক পরিবর্তন হলো বাংলাদেশ যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা তারা গণ্য করে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক দিয়ে একটি মাহেন্দ্রক্ষণে আছে। এ সম্ভাবনাকে বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগাবে, কীভাবে এটিকে একটি যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাবে, সেটা এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশকে এখন আর ছোট দেশ নয় উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আজকের দুনিয়ায় বড়-ছোট শুধু জনসংখ্যা বা অর্থনৈতিক আয়তন দিয়ে হয় না। এটা ঠিক হয় অর্থনীতির ভিত্তি কতটা শক্তিশালী, ধাক্কা সহ্য করার ক্ষমতা কতটুকু, সামাজিক শক্তি কতটুকু, নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষমতা কতটুকু—এসব বিষয় বিবেচনায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট, এই মানসিকতা বদলাতে হবে। নইলে আমরা কখনো বড় হতে পারব না। আমার দেশের শক্তি আসবে অর্থনীতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, শিল্পায়নের মাধ্যমে, কৃষিকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে, সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি করা ইত্যাদির মাধ্যমে। এবং এর সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা, শান্তি, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করাও গুরুত্বপূর্ণ।’
অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত শাহেদ আহমেদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (সার্ক ও বিমসটেক অণুবিভাগ) তারেক আহমেদ মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।