ধান, গম, শর্ষে ছেড়ে আম চাষে ঝুঁকছেন নওগাঁর চাষিরা

একসময় নওগাঁর দিগন্তবিস্তৃত মাঠগুলোয় মূলত ধান, গম ও শর্ষের আবাদ হতো। এখন সেই সব ফসলি মাঠের অনেকটা জায়গাজুড়ে ফলেরও চাষ হয়। আর ফলটি হলো আম। লাভজনক হওয়ায় এদিকে–ওদিকে, চারদিকে বাণিজ্যিকভাবে একের পর এক আমবাগান গড়ে তোলা হচ্ছে।

এ নিয়ে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাহাত জামান বলেন, ‘আগে আমরা রাজশাহী কিংবা চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুঁজতাম। এখন নওগাঁর আম কিনতে দেশের বহু জায়গা থেকে মানুষ আমাদের এলাকায় আসে।’

ধান, গম ও শর্ষে ফলানো জমিতে দিন দিন আমবাগান বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণটি আর্থিক। এ সম্পর্কে সাপাহার উপজেলা আমচাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান বাজারে এক মণ ধানের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, আর এক মণ আমের দাম ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আবার বিঘাপ্রতি ধানের চেয়ে আমের ফলনও বেশি। সে জন্য মানুষ আম চাষে ঝুঁকছেন। এর ফলে আমকে ঘিরেই এখন পত্নীতলা, সাপাহার, পোরশা উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চলের অর্থনীতি চাঙা হয়ে উঠছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫ মেট্রিক টন ধরে জেলায় মোট আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন। এ আমের সম্ভাব্য মূল্য প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। জেলায় সর্বোচ্চ ১০ হাজার ৫১০ হেক্টরে আমের আবাদ হয়েছে পোরশা উপজেলায়। অন্য উপজেলাগুলোর মধ্যে সাপাহারে ১০ হাজার, পত্নীতলায় ৪ হাজার ৮৬৫, নিয়ামতপুরে ১ হাজার ১৩৫, নওগাঁ সদরে ৪৪৫, মান্দায় ৪০০, বদলগাছীতে ৫২৫, ধামইরহাটে ৬৭৫, মহাদেবপুরে ৬৮০, রানীনগরে ১১০ ও আত্রাইয়ে ১২০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শামীম ইকবাল বলেন, ‘নওগাঁর আমের স্বাদ ভালো। তাই প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ বাড়ছে। সাধারণ চাষিদের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তারাও আসছেন।’

নওগাঁয় ইতিমধ্যে আমের বাজার জমে উঠেছে। এখন হিমসাগর (ক্ষীরশাপাত) ও নাকফজলি শেষ হওয়ার পথে। আম্রপালি আর ল্যাংড়া আম তিন–চার দিন হলো উঠতে শুরু করেছে। গত বুধবার জেলার সবচেয়ে বড় আমের বাজার সাপাহারে গিয়ে দেখা যায়, আমের ভালো দাম পেয়ে উদ্যোক্তারা বেশ খুশি। এই জেলায় সবচেয়ে বেশি হয় আম্রপালি জাতের আমের চাষ। জেলায় উৎপাদিত আমের প্রায় ৬০ শতাংশই আম্রপালি। এ ছাড়া বারি-৪, গৌড়মতি, আশ্বিনা, গোপালভোগ, কাটিমন প্রভৃতি আমের চাষও হয়ে থাকে।

সরেজমিনে গত বৃহস্পতিবার সাপাহার মোকামে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি মণ আম্রপালি ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ল্যাংড়া ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, হিমসাগর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা, নাকফজলি ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সাপাহার আমবাজার আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্তিক সাহা বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে ৪০০–৫০০ ট্রাক আম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে যায়। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এসব আমের দাম ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার মতো হবে।