নতুন গাড়ি আমদানি বাড়ছে, কমছে পুরোনো গাড়ি

পাঁচ অর্থবছরে নতুন গাড়ি আমদানি ১২ শতাংশ বেড়ে ১৮ শতাংশে উঠেছে। পুরোনো গাড়ি আমদানি ১২ শতাংশ কমে ৮২ শতাংশে নেমেছে।

দেশে গাড়ি আমদানিতে এখনো জাপানের রিকন্ডিশনড বা ব্যবহৃত গাড়ির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। চাহিদা থাকায় এ ধরনের গাড়ি আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এই ধারা ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। কারণ, দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশের ফলে দিন দিন নতুন গাড়ির আমদানি বাড়ছে। ফলে পুরোনো গাড়ির আমদানি ধীরে ধীরে কমছে।

গাড়ি আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া কিংবা কমে যাওয়াটা নির্ভর করে ক্রেতাদের চাহিদার ওপর। ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা আছে বলেই তাঁরা বিদেশে ব্যবহৃত তথা পুরোনো গাড়িই বেশি আমদানি করছেন। তবে দেশে এখন নতুন গাড়িরও ক্রেতা তৈরি হয়েছে। এদিকে নতুন গাড়ির বাজার ধরতে ইদানীং গাড়ি সংযোজন শিল্পে দেশি–বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বাড়ছে।

গাড়ি আমদানি হয় মূলত চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর দিয়ে। দুই বন্দরের গত পাঁচ অর্থবছরের তথ্য পর্যালোচনা করে নতুন গাড়ির আমদানি বৃদ্ধি পাওয়া ও পুরোনো গাড়ির আমদানি কমে যাওয়ার চিত্র পাওয়া গেছে। যেমন, ২০১৫–১৬ অর্থবছরে দুই বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি হয় প্রায় ৩৫ হাজার। এর মাত্র ৬ শতাংশ ছিল নতুন গাড়ি, বাকি ৯৪ শতাংশই পুরোনো বা অব্যবহৃত গাড়ি। পরবর্তী পাঁচ বছরে নতুন গাড়ি আমদানির সংখ্যা বেড়েছে। এর বিপরীতে কমেছে পুরোনো গাড়ি আমদানি। ২০১৯–২০ অর্থবছরে দেশে মোট সাড়ে ২৪ হাজার গাড়ি আমদানি হয়। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ ছিল নতুন গাড়ি, আর পুরোনো গাড়ি ৮২ শতাংশ।

ব্যবহৃত গাড়ির হিস্যা কমে যাওয়া সম্পর্কে গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশনড ভেহিকেল ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাপানের ব্যবহৃত গাড়ির মান ভালো হওয়ায় বাজারে এখনো সিংহভাগ হিস্যা সেই দেশের গাড়ির। তবে আমাদের হিসাবে ব্যবহৃত গাড়ির বাজার এখন ৭০ শতাংশ। ব্যবহৃত গাড়ির চাহিদা আগের চেয়ে কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো নতুন গাড়ির সঙ্গে পুরোনো গাড়ির শুল্কায়নবৈষম্য। এই বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছি আমরা।’

একই মডেলের নতুন–পুরোনো গাড়িতে দামের ব্যবধান কমে এসেছে। নতুন গাড়িতে ওয়ারেন্টি সুবিধা পাচ্ছেন ক্রেতারা। আবার দেশের অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ির চাহিদা আছে। এসব কারণে নতুন গাড়ির বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।
—নাসিমুল গণি, এজিএম, নাভানা লিমিটেড

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পুরোনো গাড়ির সিংহভাগই বিক্রি হয় ব্যক্তি খাতে। আর প্রতিবছরই পুরোনো গাড়ির দাম বাড়ছে। তাতে বাজারে প্রভাব পড়ছে। অর্থাৎ নতুন ও পুরোনো গাড়ির মধ্যে দামের ব্যবধান কমে আসছে। ফলে ক্রেতারা স্বাভাবিকভাবেই নতুন গাড়ির দিকে ঝুঁকছেন।

অন্যদিকে নতুন গাড়ির সিংহভাগই কেনে সরকারি সংস্থা, বহুজাতিক কোম্পানি, বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ব্যাংক ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে বড় বড় সরকারি–বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছেই সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রি হয়। আবার ব্যক্তি খাতে নতুন গাড়ির ক্রেতাশ্রেণিও এখন গড়ে উঠছে। কারণ, দেশে দিন দিন মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ ঘটছে। ফলে নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়ছে।

ব্যবহৃত গাড়ির চাহিদা আগের চেয়ে কমে যাওয়ার মূল কারণ হলো নতুন গাড়ির সঙ্গে পুরোনো গাড়ির শুল্কায়নবৈষম্য। এই বৈষম্য নিরসনের দাবি জানিয়েছি আমরা।
—মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, মহাসচিব, বারভিডা

করোনার কারণে সরকার চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য গাড়ি না কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নতুন গাড়ি বিক্রি কিছুটা কমেছে। তবে সেটাকে সাময়িক বলে মনে করেন নতুন গাড়ির পরিবেশকেরা।

জানতে চাইলে জাপানের টয়োটা ব্র্যান্ডের নতুন গাড়ির পরিবেশক নাভানা লিমিটেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) নাসিমুল গণি প্রথম আলোকে বলেন, একই মডেলের নতুন–পুরোনো গাড়িতে দামের ব্যবধান কমে এসেছে। নতুন গাড়িতে ওয়ারেন্টি সুবিধা পাচ্ছেন ক্রেতারা। আবার দেশে অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য নতুন গাড়ির চাহিদা আছে। এসব কারণে নতুন গাড়ির বাজার ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।