পণ্য বেচাকেনার সবচেয়ে বড় মাধ্যম এখন ‘দারাজ’

করোনার এ সময় বাজারে গিয়ে কেনাকাটার চেয়ে অনেকের কাছে হাতে থাকা মুঠোফোনটিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। স্ক্রল করতে করতে পণ্য দেখে অর্ডার দিচ্ছে মানুষ। আর কয়েক দিনের মধ্যে পছন্দের পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়। দেশের জনগণকে অনলাইন মাধ্যমে কেনাকাটায় যারা অভ্যস্ত করেছে, তাদের অন্যতম কেনাকাটার ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান দারাজ। বাংলাদেশে পথচলার সাত বছর পূর্ণ করেছে বহুজাতিক এই ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান।

দারাজে এখন দৈনিক এক লাখ ক্রয়াদেশ আসছে। পণ্য কেনাবেচা ও গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে দেশের ৬৪ জেলায় রয়েছে তাদের নিজস্ব অফিস। ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান দারাজ বাংলাদেশ। দারাজের সেবাকে সবার ঘরে পৌঁছে দিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে আলিবাবা। আরও দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ পাবে বলে অপেক্ষায় আছে দারাজ বাংলাদেশ।

দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মোস্তাহিদল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারাজ সবার ঘরে পৌঁছে যেতে চায়। দারাজে দৈনিক ১০ লাখ ক্রয়াদেশ আসবে, এমন দিনের অপেক্ষায় আমরা। এ জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হচ্ছে। দারাজ ভোক্তার টাকা নিয়ে কোনো ব্যবসা করে না। এ জন্য সেবা নিয়ে অভিযোগ কম।’ দারাজের এমডির মতে, দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা করতে চান বলেই গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনেও তাঁদের মনোযোগ আছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে দারাজের কার্যক্রমের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। শুরুর দিকে ২০১৬ সালে আরেক বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান কায়মুর সঙ্গে একীভূত হয় দারাজ। ২০১৭ সালে দারাজের পরিচালনায় প্রথম বাংলাদেশি এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই সময় দারাজের গ্রাহক ছিলেন পাঁচ লাখ। আলিবাবা দারাজকে কিনে নেয় ২০১৮ সালে। তবে দারাজ নামেই কার্যক্রম চলতে থাকে। ওই বছর প্রতিষ্ঠানটি ১০ লাখ গ্রাহক পায়। বর্তমানে চার হাজার বিক্রেতার চার লাখ পণ্য বিক্রি হয় এই প্ল্যাটফর্মে। দারাজে বর্তমানে বিদেশি পণ্যও বেচাকেনা হয়। ২০২০ সালে দারাজে অভূতপূর্ব সব রেকর্ড হয়। ১ ঘণ্টায় ২৫ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়। অনলাইনে গরুও বিক্রি হয় তাদের মাধ্যমে। আর চলতি বছর হাংরিনাকি নামে আরেকটি ই–কমার্স প্রতিষ্ঠানকেও কিনে নেয় দারাজ।

গ্রাহক ও বিক্রেতাদের সেবা দিতে দারাজে কাজ করছেন ছয় হাজারের বেশি কর্মী। দারাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৪০ হাজারের বেশি বিক্রেতা। প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষ দারাজ অ্যাপ ভিজিট করছে এবং দৈনিক দেড় লাখ পণ্য প্যাকেট করার সক্ষমতা রয়েছে দারাজের। এর বেশির ভাগই হচ্ছে প্রযুক্তির সহায়তায়। এখন দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স পণ্যাগারটি (ওয়্যারহাউস) দারাজের, যার রয়েছে ১৩৩টি পিকআপ পয়েন্ট।

দারাজ অনলাইন ও অ্যাপে মোটাদাগে ১৮ শ্রেণির পণ্য পাওয়া যায়। একেকটি শ্রেণির মধ্যে আবার অনেক পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ইলেকট্রনিক অ্যাকসেসরিজ, টেলিভিশন অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য পণ্য, শিশুদের খেলনা, গ্রোসারি পণ্য, লাইফস্টাইল, নারী ও পুরুষের পোশাক, ঘড়ি ও গাড়ি। দারাজের লক্ষ্য, দেশে এমন কোনো পণ্য থাকবে না, যা দারাজে পাওয়া যাবে না। এখনই অনেকটা সেই পর্যায়ে চলে এসেছে তারা।

দারাজের বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযোগ না থাকলেও ছোটখাটো কিছু অভিযোগ ঠিকই রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে, যার বেশির ভাগই পণ্যের মান নিয়ে। এ ব্যাপারে দারাজের বক্তব্য হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে মানের বিষয়টি তাদের হাতে থাকে না। গ্রাহক ক্রয়াদেশ দিলে বিক্রেতা তা পৌঁছে দেন গ্রাহকের দুয়ারে। দারাজ এখানে শুধু মাধ্যম। তবে অভিযোগ নিষ্পত্তিও হয়ে যায়। বড় ধরনের কোনো অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে নেই বলে দাবি করেন দারাজের এমডি সৈয়দ মোস্তাহিদল হক। তিনি বলেন, দারাজের মাধ্যমে পণ্য বিক্রির জন্য বিক্রেতাদের একসময় প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।