পাঁচ টাকা এখন সরকারি মুদ্রা

বর্তমানে বাজারে প্রচলিত সাবেক গভর্নরের স্বাক্ষরযুক্ত পাঁচ টাকার ব্যাংক নোট।
বর্তমানে বাজারে প্রচলিত সাবেক গভর্নরের স্বাক্ষরযুক্ত পাঁচ টাকার ব্যাংক নোট।

এক ও দুই টাকার পাশাপাশি পাঁচ টাকাও এখন সরকারি মুদ্রা। এত দিন পাঁচ টাকা ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা। গভর্নরের স্বাক্ষরে এখন বাজারে রয়েছে সেই পাঁচ টাকার নোট। কিন্তু সরকারি মুদ্রা হিসেবে এখন থেকে পাঁচ টাকার নোটে স্বাক্ষর করবেন অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ। অর্থসচিবের স্বাক্ষর করা পাঁচ কোটি টাকার সমমূল্যের এক কোটি পিস নোট বাজারে আসছে আগামী ৬ জুন। অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এত দিন সরকারি মুদ্রা ছিল ১ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। আইন অনুযায়ী এখন সরকারি মুদ্রা হবে ১ পয়সা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার, ১৯৭২ সংশোধন করে গত বছর পাঁচ টাকাকে ব্যাংক মুদ্রা থেকে সরকারি মুদ্রায় রূপান্তর করে সরকার। এর ফলে দেশে প্রথমবারের মতো পাঁচ টাকার নোটে অর্থসচিবের স্বাক্ষর যুক্ত হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘শিগগিরই আমরা পাঁচ টাকার নোট বাজারে ছাড়ার তারিখ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব।’
এদিকে বাংলাদেশ কয়েনেজ অর্ডার আইন সংশোধনের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কার্যপত্রে বলা হয়, সরকারি মুদ্রা সরকারের ঐতিহ্যের স্মারক। কিন্তু অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও তাল মিলিয়ে সরকারি মুদ্রা বাড়েনি। আবার মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমছে। ৪০ বছর আগের ১ টাকার ক্রয়ক্ষমতা বর্তমানে ১২ টাকা ৪৫ পয়সার সমান।
বিশ্বজুড়েই ব্যাংক মুদ্রা ও সরকারি মুদ্রা—এ দুই আকারে মুদ্রা চালু থাকে। বাংলাদেশেও তাই রয়েছে। ২ টাকা পর্যন্ত সরকারি মুদ্রার মধ্যে বর্তমানে ১, ৫ ও ১০ পয়সার ধাতবমুদ্রা অচল পয়সা হিসেবে পরিচিত। কেনাকাটায় এগুলোর ব্যবহার নেই, কিন্তু সরকার এগুলো বাতিলও করেনি।
২৫ ও ৫০ পয়সার ধাতবমুদ্রাও প্রায় অচল। এমনকি ১ টাকার ধাতব মুদ্রা-নোটও দিন দিন বিরল হয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে ২ টাকার কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা। সরকার এগুলো বাজারে ছাড়ে।
৫ টাকা বাদ দিলে ব্যাংক নোট বা ব্যাংক মুদ্রার মধ্যে বর্তমানে বাজারে রয়েছে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোট। এগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক বের করে।
শুভঙ্কর সাহা বলেন, বর্তমানে ৫ টাকার ৪০০ কোটি টাকার ধাতব মুদ্রা ও ৪০০ কোটি টাকার কাগুজে নোট বাজারে রয়েছে।
সব সরকারি মুদ্রার ছাপার কাজই বাংলাদেশ ব্যাংক করে থাকে জানিয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের স্বাক্ষর করা পাঁচ টাকার যে ধাতব মুদ্রা ও নোটগুলো বাজারে বর্তমানে চালু রয়েছে, সেগুলো এখন সরকারি মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৯৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা মূল্যমানের কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। অচল ১ পয়সা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট পর্যন্ত সব মুদ্রাই রয়েছে এই ৯৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকার মধ্যে। প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে ব্যাংক নোটের মূল্যমান ৯২ হাজার ৩৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সরকারি মুদ্রার মূল্যমান হচ্ছে ৭৯৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বাজারে প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে ব্যাংক মুদ্রা ৯৯ দশমিক ১৭ শতাংশ আর সরকারি মুদ্রা শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গত বছরের জুলাইয়ে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপিত এক সার-সংক্ষেপে বলা হয়, পাঁচ টাকা সরকারি মুদ্রায় যুক্ত হওয়ায় তাতে দেশে প্রচলিত মোট মুদ্রায় সরকারি মুদ্রার হিস্যা শূন্য দশমিক ৮৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দেড় শতাংশে উন্নীত হবে।
পাঁচ টাকাকে সরকারি মুদ্রা করায় দেশের মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় কী প্রভাব পড়বে—জানতে চাইলে অর্থসচিব প্রথম আলোকে বলেন, এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ কমবে ৭৯০ কোটি টাকা। মোট অর্থের জোগানের কোনো পরিবর্তন হবে না, মূল্যস্ফীতিতেও প্রভাব পড়বে না। কারণ, সরকারি মুদ্রা যতটা বাড়বে, ব্যাংক নোট বা মুদ্রা ততটাই কমবে।