পাইকারি–খুচরা ব্যবসায় ভ্যাট কমছে

এসি রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকানে খাবারের বিলে ভ্যাট ১০ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম বড় খাত হলো পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা। এ খাত থেকেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ১৫ শতাংশ আসে। সারা দেশে এমন প্রায় ৪০ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা পাইকারি ও খুচরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে সুখবর আসছে। তাঁদের ব্যবসায়ে ভ্যাট কমানোর পরিকল্পনা করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় এ ঘোষণা দিতে পারেন।

বর্তমানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দিতে হয়। এটি কমিয়ে দেড় থেকে ২ শতাংশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। এর ফলে জিনিসপত্রের দামে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। অর্থাৎ দাম কমার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ভ্যাট বসে মূল্য সংযোজনের ওপর। কিন্তু খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা পর্যায়ে তুলনামূলক কম পরিমাণে মূল্য সংযোজন হয়। আরোপিত ভ্যাট সেই তুলনায় অনেক বেশি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হলে মূল্য সংযোজন করতে হবে ৩০ শতাংশের বেশি। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে এত মূল্য সংযোজন হয় না। বড়জোর ১০ থেকে ১২ শতাংশ মূল্য সংযোজন হয়ে থাকে।

এবার দেখা যাক, জিডিপিতে পাইকারি ও খুচরা খাতের অবদান কেমন। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে জিডিপির সাময়িক হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (জিডিপি) বলেছে, চলতি অর্থবছরে চলতি মূল্যে খুচরা ও পাইকারি খাত মিলিয়ে ৫ লাখ ৭২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন হয়। এর মানে উৎপাদন খাতের পর এ খাত থেকেই অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি মূল্য সংযোজন হয়েছে। সেই হিসাবে, সবাই যদি ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিত, তাহলে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার ভ্যাট আদায় হতো। কিন্তু ৫০ লাখ টাকার কম বার্ষিক লেনদেন ভ্যাটমুক্ত। আবার হিসাব-নিকাশে অসুবিধার কারণেও পর্যাপ্ত ভ্যাট আদায় হয় না। এ খাতে গড়ে দুই-তিন হাজার কোটি টাকাও ভ্যাট আদায় হয় না বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু মোতালেব প্রথম আলোকে বলেন, ভ্যাট কমালেও তেমন একটা কাজ হবে না। কারণ, এসব ব্যবসায়ীর হিসাব রাখার মতো দক্ষতা নেই। আবার একজন হিসাববিদ রাখার সামর্থ্যও নেই। এ জন্য খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বসাতে হবে। কিন্তু গত ১০ থেকে ১২ বছরে এ ধরনের মেশিন বসানো যায়নি। প্রথমে বিনা মূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও এখন এনবিআর বলছে, ইএফডি মেশিন কিনে নিতে হবে, যা ব্যবসায়ীদের বাড়তি খরচ হিসেবে যোগ হবে।

এদিকে আগামী অর্থবছরে রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুড ব্যবসায়ীদের জন্য সুখবর আসতে পারে। কারণ, রেস্তোরাঁ ও ফাস্ট ফুডের দোকানের খাবারে ভ্যাট কমতে পারে। বর্তমানে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেস্তোরাঁ ১০ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এটি কমিয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় রেস্তোরাঁর খাবারের দামও বেড়েছে। তাই ভোক্তাকে বেশি ভ্যাট পরিশোধের চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে ভ্যাটের হার কমানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে সাধারণ রেস্তোরাঁর ভ্যাটের হার অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এ ভ্যাটের হার হলো ৫ শতাংশ। অবশ্য পাড়া–মহল্লার বেশির ভাগ রেস্তোরাঁয় ভ্যাটের রসিদ দেওয়া হয় না। আবার অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বার্ষিক লেনদেন ৫০ লাখ টাকার কম দেখিয়ে ভ্যাট মওকুফ সুবিধা পেয়ে যায়।