পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত আনতে নতুন করে টাস্কফোর্স

বিদেশে সম্পদ পাচার হওয়া ও পাচার করা সম্পদ ফেরত আনার বিষয়ে গত মে মাসে গণমাধ্যমে অনেকবার কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরই মধ্যে বিদেশে পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে ৯ বছর আগে গঠিত টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। আগের টাস্কফোর্সে সদস্য ছিলেন ১০ জন, সেই সংখ্যা বাড়িয়ে এখন ১৪ জন করা হয়েছে।

তবে কমিটির আহ্বায়ক আগে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল, এখনো তিনিই থাকছেন। গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।

গত ২৫ মে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘কানাডার বেগমপাড়া বা পশ্চিমবঙ্গে বন্দী প্রশান্ত কুমার হালদারদের মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হবে, যদি কেউ নিজ উদ্যোগে ফেরত নিয়ে আসেন ভালো, তাঁদের প্রশ্ন করা হবে না; আর অর্থ ফেরত আনার জন্য করারোপ করা হবে ন্যূনতম।’

পাচার হওয়া অর্থ এভাবে ফেরত আনতে গেলে নতুন নতুন পাচারকারী তৈরি হতে পারে এবং অবৈধভাবে অর্জন করা অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে পরে দেশে এনে বৈধ করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সেদিন এ–ও বলেছিলেন, ‘অর্থ আগে দেশে ফেরত আসা দরকার, আমরা সেভাবে এগোচ্ছি।’

গতকাল জারি হওয়া প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের মহাপরিচালক, এনবিআরের কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ), পুলিশের সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক।

বিএফআইইউর উপপ্রধান কর্মকর্তা সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিএফআইইউ পুরো টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। ২০২৩ সালের ২৮ মে জারি হওয়া আগের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী এনবিআর চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর টাস্কফোর্সের সদস্য ছিলেন। কিন্তু এবার তাঁদের রাখা হয়নি। বিএফআইইউর দুজন কর্মকর্তাকেও এবার নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে।

টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি বাড়িয়ে দুটির বদলে তিনটি করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে, বিদেশে পাচার করা সম্পদ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেরত আনার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা। পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে দায়েরকৃত মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা ও তা দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং এ বিষয়ে বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য সংগ্রহ ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় করা। আগের টাস্কফোর্সের কার্যপরিধিতে মামলার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে কিছু বলা ছিল না।

আগের টাস্কফোর্স গঠনের পর অন্তত সাত বছর অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন প্রয়াত মাহবুবে আলম। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান এ এম আমিন উদ্দিন।

গত রাতে মুঠোফোনে জানতে চাইলে এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে অনেক বৈঠক হয়েছে। অনেক তথ্য জোগাড় করে আদালতে প্রতিবেদনও দাখিল করেছি।’ উল্লেখ করার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিএফআইইউর কাছে বিশদ তথ্য আছে।

জানা গেছে, জার্মানি, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেন, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ যেভাবে তাদের দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার কৌশল অবলম্বন করছে, বাংলাদেশও সে পথে এগোবে। পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনার একটি কৌশল হচ্ছে, সম্পদ বিদেশে রেখেই তাঁদের কাছ থেকে কর সংগ্রহ করা। এটি হচ্ছে বাড়ি-গাড়ির মতো স্থাবর সম্পদের ক্ষেত্রে; অন্যটি হচ্ছে নগদ অর্থ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে।
বলা হচ্ছে বিদেশে ইতিমধ্যে যাঁরা সম্পদ গড়েছেন, আয়কর রিটার্নে তাঁরা সেটা দেখাতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের প্রশ্ন করা হবে না। তবে কর দিতে হবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে নতুন ঘোষণাও থাকতে পারে অর্থমন্ত্রীর।

ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার পাচার হয়, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা।