প্রতিদিন বড়সড় কর্মযজ্ঞ

ব্রেইন স্টেশন ২৩–এর চিত্র সবসময় এমনই। ছবি: কবির হোসেন
ব্রেইন স্টেশন ২৩–এর চিত্র সবসময় এমনই। ছবি: কবির হোসেন

বাংলাদেশের একটি সফটওয়্যার কোম্পানি কত বড় হতে পারে? প্রশ্নটির উত্তর জানতে ব্যক্তিগত এক ছুটির দিনে ছুটলাম রাজধানী মহাখালীর ব্রেন স্টেশন ২৩-এর অফিসে। ছুটতে ছুটতে এসে অভ্যর্থনা জানালেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাইসুল কবির। ঘুরে ঘুরে দেখালেন ৩০৭ জনের বেশি সফটওয়্যার প্রোগ্রামার ও ডেভেলপার নিয়ে কর্মযজ্ঞ চালানো কয়েক তলার অফিস। এখানেই ডেভেলপাররা কাজ করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নানা প্রকল্প নিয়ে। রাইসুল শুরুই করলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদাতা কোম্পানি এখন তার ব্রেন স্টেশন ২৩।

বিশ্বখ্যাত অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম পেপালের নাম তো শুনেছেন? যদি বলি, পেপালের প্রথম ক্রেডিট সেবা সমন্বয় করার কাজটি যে সফটওয়্যার কোম্পানি করেছিল, সেই একই কোম্পানি বাংলাদেশের সেরা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ সিটি ব্যাংকের ‘সিটি টাচ’ তৈরি করেছে, তাহলে হয়তো অবাক হবেন না। কিন্তু যদি আপনাকে বলা হয়, পেপালের ক্রেডিট সেবা সমন্বয় করার কাজটি এবং সিটি টাচের নির্মাতা কোম্পানিটি বাংলাদেশি সফটওয়্যার কোম্পানি, তাহলে অবশ্যই আপনি একই সঙ্গে গর্বিত ও অবাক হতে বাধ্য। অবাক করার মতো হলেও সত্যি! ব্রেন স্টেশন ২৩–এর শুরুটাই হয়েছিল পেপালের ক্রেডিট সেবা (বিল মে লেটার) সমন্বয় করার কাজটির মাধ্যমে। এরপর একের পর এক বিদেশি এমএনসি ব্রিটিশ টেলিকম, টেলিনর, নিশান, আজিয়াটা, মারুবশি, টয়োটা প্রভৃতি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে থাকে ব্রেন স্টেশন। ২০০৬ থেকে ২০১২–তে ব্রেন স্টেশন ২৩ শুধু দেশের বাইরে, বিশেষ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোতে সফটওয়্যার সেবা দিয়ে আসছিল। ২০১২–তে সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্টের প্রস্তাব আসে ব্রেন স্টেশনের কাছে। সিটি ব্যাংক তখন ভারতীয় নির্মাতাকে নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট ছিল। চ্যালেঞ্জিং কাজটি ব্রেন স্টেশন ২৩–এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও রাইসুল কবির নেওয়ার পর তৈরি হয় বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপটি।

ব্রেন স্টেশন ২৩ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশের মেধাবীদের কর্মসংস্থানের স্বপ্ন নিয়ে। দেশে বসেই যেন আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে সফটওয়্যার, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সেবা থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সেবা দিতে পারে, সেই লক্ষ্যেই ব্রেন স্টেশন শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কাজ করে চলেছে। ব্রেন স্টেশন সব সময়ই উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে আসছে। রাইসুল কবির লক্ষ করলেন, বাংলাদেশে থাকা এন্টারপ্রাইজগুলো দেশের বাইরে থেকে প্রযুক্তি সেবার জন্য সেবাদাতা ভাড়া করছিল এবং তাদের ডেলিভারি ও মান নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছিল। যেখানে বাংলাদেশে বসে ব্রেন স্টেশন ব্রিটিশ টেলিকম, পেপালের মতো কোম্পানিকে সেবা প্রদান করে আসছে; সেখানে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোকে ভুগতে হবে, এটা মানতে পারেননি রাইসুল।

২০১২ থেকে ব্রেন স্টেশন ২৩ বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানির পাশাপাশি দেশে থাকা বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তিগত সেবা প্রদানের কাজ শুরু করে। সিটি ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, বেক্সিমকো ফার্মা, প্রাণ, ব্র্যাক, বার্জার ইত্যাদি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয় ব্রেন স্টেশনের নাম। বর্তমানে ব্রেন স্টেশনে তিন শতাধিক প্রকৌশলী কর্মরত। কোম্পানিটির বার্ষিক ক্রমবিকাশের হারও প্রশংসাজনক। গড়ে ৩৫ শতাংশ গ্রোথ রেট নিয়ে টেকসই গতিতে এগিয়ে চলছে ব্রেন স্টেশন। ২০২১ সাল নাগাদ ৫০০ মানুষের কোম্পানিতে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাবে ব্রেন স্টেশন।

রাইসুল বললেন, ব্রেন স্টেশন ২৩ পার্টনারশিপ বা অংশীদারত্বে বিশ্বাসী। এ জন্যই জার্মানি, নরওয়ে, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নাইজেরিয়াসহ ৮টি দেশে রয়েছে ব্রেন স্টেশন ২৩–এর সহযোগী ও শাখা অফিস, যাদের সহযোগিতায় ১৫টির বেশি দেশে ব্রেন স্টেশন সফটওয়্যার সেবা প্রদান করে আসছে। ব্রেন স্টেশন ২৩ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই কোম্পানিটির মূলমন্ত্র ছিল বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করা। একই সঙ্গে দেশেই আন্তর্জাতিক মানের চাকরির সুযোগ তৈরি করা, দেশে বসে বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন এবং দেশের টাকা দেশে রাখা।

নতুনদের সুযোগ দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাইসুল বলেন, প্রতিবছর ব্রেন স্টেশন ২৩-এ অনেক ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটকে চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়, যেখানে তাঁদের প্রতিনিয়ত নতুন নতুন টেকনোলজিতে দক্ষ হতে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে বাংলাদেশের যুবসমাজকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তারা একটি অবহেলিত শিশুদের বিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ খরচ বহন করে আসছে।

l প্র বাণিজ্য প্রতিবেদক