প্রায় ১০ হাজার পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের শিকার, দাবি ৩ সংগঠনের

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের এই মহামারির সময়ে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পোশাক কারখানা প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত করেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারখার শ্রমিকেরা ছাঁটাই বা কর্মচ্যুতির শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশন (বিজিআইডব্লিউএফ), বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্ট শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন (বিআইজিইউএফ) এবং বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি (বিসিডব্লিউএস) গতকাল রোববার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটাই দাবি করেছে। তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রী করোনার সময় শ্রমিকদের ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত না করতে নিষেধ করলেও পোশাকশিল্পের মালিকেরা সেই নির্দেশনা অমান্য করেই অমানবিকভাবে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই বা কর্মচ্যুত করেছেন।
বিজিআইডব্লিউএফ সভাপতি বাবুল আখতার, বিআইজিইউএফ সভাপতি নমিতা নাথ ও বিসিডব্লিউএসের নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা ছাঁটাইকৃত শ্রমিকদের চাকরিতে বহাল করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে।
শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করা এই তিন সংগঠন ও সংস্থা জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি ২৬ মার্চ শুরু হয়। তখন পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ কারখানা বন্ধের অনুরোধ করলেও অনেকেই তা না মেনে উৎপাদন চালিয়ে যান। তখন কিছু কারখানা সাধারণ ছুটি দিলেও বেশির ভাগই লে-অফ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলে কারখানা লে-অফ করার প্রবণতা বাড়ে। লে-অফ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন পূর্ণ মজুরি পাবেন না। এমনকি যাঁদের চাকরির বয়স ১ বছরের কম, তাঁরা কোনো মজুরি বা ভাতা পাবেন না। লে-অফ ঘোষণা করা কারখানাগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নতুন শ্রমিক (চাকরির বয়স ১ বছরের নিচে)।

বিজিআইডব্লিউএফ, বিআইজিইউএফ ও বিসিডব্লিউএস দাবি করেছে, লে-অফ ঘোষণা করার পর থেকেই অনেক পোশাকশ্রমিক বেকার হয়েছেন। তাঁরা মারাত্মক আর্থিক সংকট ও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁরা লে-অফ প্রত্যাহার করে বন্ধের দিনগুলোকে সাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য করে শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরি দেওয়ার দাবি করেন।
কিছু কারখানা শ্রমিকদের মার্চের মজুরি কম দিয়েছে, এমন অভিযোগ করে বিজিআইডব্লিউএফ, বিআইজিইউএফ ও বিসিডব্লিউএস। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ১৬ এপ্রিলের মধ্যে যেসব কারখানা মজুরি দেবেন, তাঁরাও শ্রমিকদের কম দিতে পারে। সেটি হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকেরা জীবন–জীবিকার প্রশ্নে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে পারেন।

বিজিআইডব্লিউএফ, বিআইজিইউএফ ও বিসিডব্লিউএস করোনার অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই না করতে সরকার ও মালিকপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের নিরপেক্ষ তালিকা করে মজুরিসহ চাকরিতে পুনর্বহাল, লে-অফ ঘোষণা করা কারখানার শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরি দেওয়া, যত দিন লকডাউন থাকবে, তত দিন শ্রমিকদের পূর্ণ মজুরি দিয়ে কারখানা বন্ধ রাখাসহ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে।
নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাইয়ের তথ্য আমাদের কাছে নেই। যদি হয়েও থাকে, তাহলে সেটি শ্রম আইন মোতাবেক হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হলে আমাদের নজরে আনলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’