ফোরজি সেবা নিশ্চিত করতে হবে সাশ্রয়ী মূল্যে

রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এলটিই সম্মেলনের একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তারা l প্রথম আলো
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ এলটিই সম্মেলনের একটি প্যানেল আলোচনায় বক্তারা l প্রথম আলো

মুঠোফোন ব্যবহারকারীদের ২৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না দুটি কারণে— ইন্টারনেট জ্ঞানের অভাব ও ডেটার উচ্চমূল্য। তাই চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ফোরজি চালু করার আগে সাশ্রয়ী মূল্যে ডেটা প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে অপারেটরদের। তা না হলে অধিকাংশ মুঠোফোন ব্যবহারকারীই আধুনিক সেবাটি থেকে বঞ্চিত থাকবেন।
দিনব্যাপী বাংলাদেশ এলটিই সামিটের উদ্বোধনীসহ বিভিন্ন অধিবেশনে ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়টি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। এলটিই হচ্ছে লং টার্ম ইভাল্যুশন বা ফোরজি প্রযুক্তি। রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল রোববার সম্মেলনটির আয়োজন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব। এতে সরকারি কর্মচারী, মোবাইল অপারেটরগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তা, হ্যান্ডসেট ও প্রযুক্তি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ টেলিযোগাযোগ খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে গত এক বছরে ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ডেটা ব্যবহারের এই প্রবৃদ্ধিই বলছে, উচ্চগতির ইন্টারনেট বা ফোরজি সেবা চালু করা এখন সময়ের দাবি। অপারেটরদের জন্য ব্যবসায়িকভাবেও বিষয়টি খুবই সম্ভাবনাময়। তবে টেকসই ফোরজি সেবা নিশ্চিত করতে হলে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সে জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড নিয়ে একটি মহাপরিকল্পনা করাও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সম্মেলন উদ্বোধনের পর ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে মোবাইল ব্রডব্যান্ডে বিনিয়োগ, নীতি ও নিয়ন্ত্রণকাঠামো নিয়ে প্যানেল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অধিবেশনটি সঞ্চালনা করেন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবীর।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে সদ্য যোগ দেওয়া পিটার বি ফারবার্গ বলেন, ফোরজি সেবার প্রধান তিনটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করা, ডেটার দাম কমানো ও সেবার মান উন্নত করা। তবে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব।’
পাইকারি বা অপারেটর পর্যায়ে ইন্টারনেট ডেটার দাম কমানো হয়েছে বলে জানান বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এমদাদ উল বারি। তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে ডেটার দাম এখনো কমানো যায়নি। তবে সরকার গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছে, কীভাবে দাম কমানো যায়। তিনি বলেন, ‘দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৯৫ শতাংশই মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাকি ৫ শতাংশ ব্রডব্যান্ডের সাহায্যে।’
বিটিআরসির এই মহাপরিচালক বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে উচ্চগতির ইন্টারনেট দরকার। এর জন্য এখানে আমরা আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে চাই।’ ইন্টারনেট ডেটার মূল্য কমাতে অবকাঠামো উন্নয়ন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি ফোরজি চালু করতে মুঠোফোন গ্রাহকদের আস্থা অর্জনে অপারেটরদের পরামর্শ দেন।
অবশ্য অপারেটরদের নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চ কর হারই প্রধান বাধা বলে মন্তব্য করেন রবি আজিয়াটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, টেলিকম সেবায় অপারেটরদের ৫০ শতাংশের বেশি কর দিতে হচ্ছে। একই সঙ্গে কম দামে সেবা দিয়ে কোম্পানিগুলো টিকতে পারবে না। সে জন্য কোম্পানি একীভূত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। তাই বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকৃত অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সুরক্ষা দিতে হবে।
করনীতি পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে মাহতাব উদ্দিন বলেন, যদি লম্বা সময় ধরে গ্রাহকদের সেবা দিতে হয়, তবে সরকারকে কম লাভ করতে হবে। অপারেটরদের স্বল্প সময়ের জন্য কিছু মুনাফা করতে দিতে হবে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, সব অপারেটর ফোরজি সেবা চালু করলে প্রতিযোগিতামূলক বাজার হবে। তখন গ্রাহকেরা পছন্দমতো অপারেটরে যেতে পারবেন। একই সঙ্গে অপারেটরগুলো উন্নত সেবা দিতে উদ্যোগী হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের ই-সেবা বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, ইন্টারনেট চাহিদা বাড়াতে কনটেন্ট উন্নয়নের কাজ ব্যাপকভাবে হচ্ছে। ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবা দিতে আমাদের প্রস্তুতি শেষ হলেও ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই কার্যকরভাবে ফোরজি সেবা আসুক।’
সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে ঢাকায় নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইয়োহান ফ্রিসেল, বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার আহসান হাবিব খান, এরিকসনের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের হেড অব নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস ইগোর মাউরেল, হুয়াওয়ের রিজিওনাল ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন ইয়োজিহি প্রমুখ বক্তব্য দেন। মধ্যাহ্নভোজের পর বাংলাদেশের ফোরজি সেবার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বিটিআরসির মহাপরিচালক কর্নেল নাসিম পারভেজ।