বন্ড ধারণকারী মারা গেলে বাড়তি সুবিধা পাবেন উত্তরাধিকারী

দেশে তিন ধরনের বন্ড রয়েছে। বন্ডগুলো হচ্ছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। তবে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের চালু করা এসব বন্ডে বিনিয়োগের সীমা সাত গুণ কমিয়ে সরকার এক কোটি টাকায় নামিয়ে এনেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দেশে তিন ধরনের বন্ড রয়েছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর এসব বন্ড চালু করেছে। বন্ডগুলো হচ্ছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। বন্ডগুলোতে বিনিয়োগসীমা এখন কম। অন্তত সাত গুণ কমিয়ে সরকার এ সীমা এক কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলারে নামিয়ে এনেছে। অর্থাৎ এখন আর একক নামে তিন বন্ড মিলিয়ে মোট এক কোটি টাকার সমমূল্যের ডলারের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করা যায় না।

বন্ডগুলোতে মুনাফার হার আগে বার্ষিক ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করা ছিল। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মুনাফার কয়েকটি স্তর করা হয়েছে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড মেয়াদ শেষে মুনাফার আগের হার ১২ শতাংশই রয়েছে শুধু ১৫ লাখ টাকার সমমূল্যের ডলার বিনিয়োগের জন্য। বিনিয়োগ বেশি হলে মুনাফা এখন কম। তবে তিন ধরনের বন্ডেই বিনিয়োগের অন্যতম দিক হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা।

মেয়াদ পূর্তির আগে বন্ড ধারকের মৃত্যু হলে তাঁর মনোনীত নমিনি বা ব্যক্তিকে যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়, সেটাই হচ্ছে মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা অবশ্য ২০ লাখ টাকার বেশি দেওয়া হয় না এবং বন্ড ধারকের বয়সও হতে হয় ৫৫ বছরের নিচে। মৃত্যুঝুঁকির সুবিধাটি নিতে গেলে মারা যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে আবেদন করতে হয়। বন্ড ধারকের মৃত্যুর পর বন্ডের মেয়াদপূর্তিতে আসল ও মুনাফা পাবেন তাঁর উত্তরাধিকারীরা।

তিন ধরনের বন্ডেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্নিয়োগ সুবিধা রয়েছে। এসব বন্ডে বিনিয়োগে বড় সুবিধা হচ্ছে, এর মুনাফা আয়করমুক্ত, বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং ফরেন কারেন্সি বা বৈদেশিক মুদ্রায় (এফসি) অ্যাকাউন্ট থাকার বাধ্যবাধকতা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদেশে অবস্থিত তফসিলি ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস, এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এবং যেকোনো তফসিলি ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলার (এডি) শাখায় গিয়ে বন্ডগুলোতে বিনিয়োগ করা যায়।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড

এটি ১৯৮৮ সাল থেকে চালু পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ড। এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী (ওয়েজ আর্নার) নিজে। ওয়েজ আর্নার তাঁর মনোনীত ব্যক্তির নামেও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত সরকারের কর্মচারীরাও বিনিয়োগ করতে পারেন ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এতে বিনিয়োগ করলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা রয়েছে।

১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের ডলারের ক্ষেত্রে মুনাফা ১২ শতাংশ হলেও ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১১ শতাংশ, ৩০ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ এবং ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি পর্যন্ত ৯ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।

ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড

এটি ২০০সালে চালু হওয়া তিন বছর মেয়াদি বন্ড। এতে বিনিয়োগ করতে পারেন অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকেরা। এ বন্ডে মেয়াদ শেষে মুনাফা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রথম বছর শেষে কেউ মুনাফা তুলতে চাইলে পাওয়া যাবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর দ্বিতীয় বছর শেষে মুনাফা মিলবে ৭ শতাংশ। এ বন্ডের বিপরীতে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকি সুবিধা রয়েছে।

ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড

এটিও ২০০২ সালে চালু হয়। এর মেয়াদ তিন বছর। প্রিমিয়াম বন্ডের মতো এ বন্ডেও বিনিয়োগ করতে পারেন অনাবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকেরা। বন্ডটিতে মেয়াদ শেষে সবচেয়ে কম মুনাফা পাওয়া যায়। মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

এ বন্ডের মুনাফার হার প্রথম বছর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ ও দ্বিতীয় বছর শেষে ৬ শতাংশ।মেয়াদ পূর্তির আগে বন্ডটির ধারকের মৃত্যু হলে মনোনীত ব্যক্তি বা নমিনিকে মৃত্যুঝুঁকি সুবিধা দেওয়া হয় ক্রয়কৃত বন্ডের ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ।