বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে রপ্তানি, পণ্য অজানা!

ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কেননা, বাংলাদেশ ইসরায়েলকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তবে এর পরও কয়েক বছর ধরেই এ দেশ থেকে ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। গেল অর্থবছরও রপ্তানি হয়েছে। তবে গত বছর কোন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সে বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েলে দুই হাজার ৫৭৭ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু কী পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তার কোনো সঠিক তথ্য নেই ইপিবির কাছে।
জানতে চাইলে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের সঙ্গে কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখা যাবে না। কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে বাণিজ্য হয় না। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে তো রপ্তানি হতেই পারে।’
কিন্তু ইসরায়েলে কী পণ্য রপ্তানি হয়েছে—জানতে চাইলে শুভাশীষ বসু বলেন, ‘হয়তো এমন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যেটাকে এনবিআর (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) কোনো এইচএস কোডে ফেলতে পারেনি। সে কারণে কোন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, তা স্পষ্ট করে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।’
রপ্তানিসংক্রান্ত ইপিবির তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে গত অর্থবছরে ইসরায়েলে ৯৮০১—এই এইচএস কোডের আওতায় পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে এই এইচএস কোডের পাশে লেখা ‘শনাক্ত করা যায়নি’ (নট ডিফাইন্ড)।
আর বাংলাদেশ কাস্টমস ট্যারিফ শিডিউল ২০১৩-১৪-তে ৯৮০১ এইচএস কোডের আওতায় ব্যাগেজের মাধ্যমে রপ্তানি এবং বিবিধ পণ্য রপ্তানির কথা উল্লেখ রয়েছে। ফলে এর আওতায় কোন পণ্য রপ্তানি হলো তা স্পষ্ট নয়।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, ‘আমরা রপ্তানির তথ্যগুলো পাই এনবিআরের কাছ থেকে। সেভাবেই আমরা রপ্তানির তথ্য সংরক্ষণ করি। সুনির্দিষ্ট চালান না দেখলে আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয় যে কী পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর চালান দেখার ক্ষমতা আমাদের নেই। এটা করতে পারে এনবিআর। তারাই এ বিষয়টি বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাজারসুবিধা) সনদ কিংবা অন্য কোনো প্রত্যয়নের প্রয়োজন থাকলে রপ্তানিকারকদের ইপিবির কাছে আসতে হতো। কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে এমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় রপ্তানিকারকেরাও আমাদের কাছে আসেননি। তাই আমরাও পণ্য সম্পর্কে কিছু বলতে পারছি না।’
তাইওয়ানের সঙ্গেও বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। কিন্তু সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। তাইওয়ানে বাংলাদেশের রপ্তানিও কম নয়। ইপিবি বলছে, এ কারণেই ইসরায়েলে পণ্য রপ্তানি হলেও সমস্যার কিছু নেই। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তাইওয়ানে ৫৭ কোটি দুই লাখ ৮০ হাজার ২৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
ইসরায়েলে আগেও রপ্তানি হয়েছে: ইসরায়েলে গত বছরই প্রথমবারের মতো পণ্য রপ্তানি হয়েছে, এমন নয়। বাংলাদেশ থেকে এর আগেও সে দেশে পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ইসরায়েলে ২২ হাজার ৪৩৫ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয় আট হাজার ৩৬৪ ডলারের পণ্য। অবশ্য গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রপ্তানি হয়েছে ২০১০-১১ অর্থবছরে। সে বছর রপ্তানি হয় ৩০ হাজার ৫৪৫ ডলারের পণ্য। আর এর আগের অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৮৬১ ডলার।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে মূলত বিভিন্ন ধরনের পোশাকই ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শার্ট, টি-শার্ট, জার্সি এবং ট্রাওজার্স। এর বাইরে অল্প কিছু সিরামিক পণ্যও ইসরায়েলে রপ্তানি হয়েছে।
ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওয়েবসাইট থেকেও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে। এতে দেখা যায় যে ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে ইসরায়েল ১৭ হাজার ৫৭১ ডলার ও ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ৫৫৮ ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।
ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, এ দেশ থেকে ইসরায়েলে দুভাবে পণ্য রপ্তানি হতে পারে। প্রথমত, ব্যক্তিপর্যায়ে সরাসরি সে দেশে পণ্য রপ্তানি হতে পারে। দ্বিতীয়ত, একটি দেশে রপ্তানির অংশ হিসেবে অন্য আরেকটি দেশে ওই পণ্য পাঠানোর শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে রপ্তানি। বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইপিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাজ্যের একজন ব্যবসায়ীর (কনসাইনি) কাছে এদেশীয় একজন রপ্তানিকারক একটি চালানের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করবেন। ওই আমদানিকারক বাংলাদেশি রপ্তানিকারককে জানালেন, চালানকৃত পণ্যের একটি অংশ ইসরায়েলে তাঁর মনোনীত একজনের কাছে (নোটিফাইং পার্টি) পাঠাতে। সে ক্ষেত্রে পণ্যটা পাঠাতে হয় ইসরায়েলে। ফলে রপ্তানিও দেখানো হবে ইসরায়েলে।