
বিশ্বে তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানিতে চীন যদি হয় রাজা, তাহলে বাংলাদেশ যেন ‘সকল কাজের কাজি’ (জ্যাক অব অল ট্রেড)। আর এটা হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্পকে সবার ওপরে অগ্রাধিকার দেওয়া থেকে শুরু করে ক্রেতাকে দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে সস্তায় সরবরাহ করার মাধ্যমে।
পোশাকশিল্প ও ফ্যাশন নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ফ্যাশন ইউনাইটেডের যুক্তরাজ্য শাখার এক প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে দামের দিক থেকে অতিপ্রস্তুত (ওভার-রেডি) হিসেবে অভিহিত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫ সাল থেকে কোটামুক্ত বিশ্ববাজার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকে অধিকতর গতি দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত কোটাসীমা থাকায় বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর পোশাক রপ্তানি একটা পর্যায়ে গিয়ে আটকে থেকেছে।
ফ্যাশন ইউনাইটেডের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের অন্যতম শক্তির জায়গাটিই হলো এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। আর তা হলো সস্তা শ্রম মজুরি।
বর্তমানে মাসিক মজুরি গড়ে ৩৮ ডলার, যা বিশ্বের সর্বনিম্ন—এ তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ অন্যদের হারিয়ে দিলেও তা আসছে বিরাট মূল্যের বিনিময়ে। আর তা হলো শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও জীবন। শ্রম মজুরিকে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য ‘দোধারি তরবারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
এ বছর রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের প্রাণহানি আর গত বছর তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের কর্মপরিবেশে নিরাপত্তাহীনতাকে অনেক বড় আকারে সামনে তুলে এনেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এখন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বা ক্রেতারা মিলে কর্মপরিবেশ উন্নত করার জন্য একযোগে কাজ শুরু করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ শিল্প থেকে শিশুশ্রম এখনো নির্মূল করা যায়নি। ৪০ লাখ পোশাকশ্রমিকের মধ্যে সাড়ে তিন লাখের বেশি পাঁচ থেকে ১৪ বছর বয়সী, যারা আবার বেশির ভাগই ছোট ও অনানুষ্ঠানিক কারখানায় কর্মরত।
প্রতিবেদন অনুসারে, পোশাক কারখানাগুলো বেশির ভাগই ঢাকার আশুলিয়া ও সাভারসহ আশপাশের কিছু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত। এ ছাড়া রয়েছে চট্টগ্রামে।
ফ্যাশন ইউনাইটেড বলছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৯০ শতাংশই আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারমুখী। মোট রপ্তানির ৬০ শতাংশ ইউরোপের বাজারে, ২৩ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও ৫ শতাংশ কানাডায় যায়। এর বাইরে বাকি যা আছে, তার বেশিরভাগই যায় অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, জাপান, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। বিশেষত শেষ তিনটি দেশ শক্তিশালী বিকল্প রপ্তানি গন্তব্য হয়ে উঠছে, যদিও প্রচলিত বাজারের তুলনায় এখানে রপ্তানি এখনো অনেক কম।