বাঙালির প্রথম ব্যাংক

১৯৫৯ সালে দ্য ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সময় চেয়ারম্যান ছিলেন চট্টগ্রামের ও আর এম নিজাম। তাঁর হাতে ধরে চট্টগ্রামের টেরিবাজারে খোলা হয় প্রধান কার্যালয়। নাম পরিবর্তন হয়ে দ্য ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংকই এখন বেসরকারি খাতের পূবালী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ২৫ লাখ টাকা, আর আমানত ছিল ১৬ লাখ। বাঙালির হাতে গড়া পূবালী ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন এখন ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা। আর আমানত ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ব্যাংকটির পরিচালক মনজুরুর রহমান স্বাধীনতার আগেই পূবালী ব্যাংকের পরিচালক পদে যুক্ত হয়েছিলেন। ওই সময়ে সবচেয়ে নবীন পরিচালক ছিলেন তিনি। ব্যাংকটির ৬০ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘৫২ বছর আগে আমি প্রথম এই ব্যাংকের পর্ষদে যুক্ত হয়েছিলাম। এখন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে ব্যাংকটিতে যুক্ত হচ্ছে। আমরা পরিচালকেরা কখনোই ব্যাংকের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করিনি। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষই ব্যাংকটি চালাচ্ছে। এ জন্য আমরা ভালো আছি।’

পূবালী ব্যাংকের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, ১৯৫৯ সালে ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নামে এর কার্যক্রম শুরু করে। বাঙালিরা যাতে ব্যবসা করতে পারে, সে জন্যই এ ব্যাংক গঠন হয়েছিল। শুরুতে চট্টগ্রামে ছিল ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ওই সময়ে ব্যাংকিং কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ১৯৭১ সালের মাঝামাঝিতে নৌকায় করে ব্যাংকের সব নথিপত্র ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ঢাকায় প্রধান কার্যালয় খোলা হয়। ওই পরিস্থিতিতেও ব্যাংকের আমানত ৩২ কোটি থেকে ৪১ কোটিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের সাতটি শাখার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রীয়করণের আওতায় ছয়টি ব্যাংক গঠন করা। তখনই দ্য ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক নাম বদলে হয় পূবালী।

১৯৭৭ সালে সরকারের নির্দেশে অবলুপ্ত ইউনাইটেড ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও ব্যাংক অব বরোদার পূবালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হয়। ১৯৮৩ সালে পূবালী ব্যাংক আবার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে ১৯৯০ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় পরিবর্তন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাংকটি নাজুক পরিস্থিতিতে পড়ে। ১৯৯০ সালে নিট লোকসান হয় ১৯ কোটি টাকা। পরের বছরে লোকসান বেড়ে হয় ৩৪ কোটি টাকা। তবে ১৯৯৪ সালেই নিট মুনাফা হয় পাঁচ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয় ৮৮৬ কোটি টাকা।

পূবালী ব্যাংকের ৬০ বছর পূর্ত নিয়ে কথা হয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল পরিবর্তন এসেছে মানবসম্পদে। পূবালী ব্যাংকের ৮৫ শতাংশ জনবলের বয়স এখন ৪০ বছরের কম। তরুণেরাই এখন পূবালী ব্যাংক চালাচ্ছেন। আর এখন প্রযুক্তিই সব। দেশের অন্যতম প্রধান ব্যাংক হতে, আমরা আরও এমন নানা উদ্যোগ নিয়েছি।’

পূবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে গর্ব করেই আবদুল হালিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংক পরিচালনায় কোনো হস্তক্ষেপ করে না। নিয়োগ, পদোন্নতি, ঋণ—কোনো ক্ষেত্রেই না।’

পূবালী ব্যাংকের এখন শাখা ৪৭৩টি। এ বছর আরও ৯টি খোলা হবে। এ ছাড়া ১৫টি ইসলামিক উইন্ডো খোলার অনুমতি পেয়েছে ব্যাংকটি। বুথ ব্যাংকিং শুরু করেছে। পূবালীর অনলাইন ব্যাংকিংয়ে কোনো মাশুলও গুনতে হয় না।

৬০ বছর পূর্তিতে ৫ বছরের জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়েছে ব্যাংকটি। এ সময়ে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, ভাবমূর্তি বাড়ানো, নতুন করে ব্র্যান্ডিং ও মানবসম্পদকে আরও দক্ষ করতে বিভিন্ন উদ্যোগের পরিকল্পনা করছে। আর আগামী পাঁচ বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, এটিএম সেবা বৃদ্ধি, কাগজবিহীন ব্যাংকিংসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। প্রতিটি শাখাকে মাসে ১০০ হিসাব খোলার লক্ষ্য দেওয়া হবে। আর প্রতিবছরে চালু করা হবে একটি করে নতুন সেবা।