বাজেট বড় ব্যবসাবান্ধব, ছোট ব্যবসাবান্ধব নয়

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সদ্য ঘোষিত বাজেট, ব্যাংক খাতসহ দেশের সার্বিক অর্থনীতি নিয়ে গত বুধবার প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি ফখরুল ইসলাম

  • সমকালীন নানা চ্যালেঞ্জের কথা অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, কিন্তু মোকাবিলার জন্য কোনো পথ বাতলে দেননি।

  • অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে গেল যথাযথ নজরদারির অভাবে। এ জন্য অনেকাংশেই দায়ী অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

  • ঘুষখোরেরা আগে চোরের মতো হাঁটত, এখন তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটে। কারণ, তারা এখন ‘স্যার’ বলে সালাম পাচ্ছে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ২০২২-২৩ অর্থবছরের সদ্য প্রস্তাবিত বাজেট কেমন দেখলেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাজেট হচ্ছে সরকারের আর্থিক বিবৃতি। মানুষের জীবনের প্রায় সবকিছুর ওপরই প্রভাব ফেলে এ বাজেট। আমরা দেখলাম অর্থমন্ত্রী ‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ নাম দিয়েছেন এবারের বাজেটের। তাহলে আমরা কি কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে গেছি? উন্নয়নের ধারাবাহিকতার প্রত্যাবর্তনেরই–বা মানে কী? মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিই কি একমাত্র বিষয়? অর্থমন্ত্রী দেখলাম বিরাট প্রস্তাবনা দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ কিছু নিয়ে আসেননি। বিশেষ কোনো কার্যক্রমও হাতে নেননি তিনি। অর্জনগুলোর কথা অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন কিন্তু চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার পথনকশা দেখাননি।

প্রশ্ন :

কী বলা উচিত ছিল অর্থমন্ত্রীর, যা তিনি বলেননি?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: অর্থ-বাণিজ্যের মধ্যেই থাকি। রাজনীতির দিকে নাই–বা গেলাম। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এ ছাড়া আছে বাণিজ্য ঘাটতি, চলতি হিসাবের নেতিবাচক চিত্র, রিজার্ভ কমে যাওয়া ইত্যাদি। দেশে বিশাল একটা বেকার শ্রেণি আছে। দুর্বলতা আছে বিভিন্ন খাতে। এসব নিয়ে তিনি ভালো কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। এমনকি ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়েও তেমন কিছু বলেননি। ১৯৮০–এর দশকে, ১৯৯০–এর দশকে এবং পরেও ব্যাংক খাতে সংস্কার হয়েছে। আজকের যে আইএফআইসি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক—এগুলোতে অনেক ঝামেলা ছিল। সংস্কারের ফলেই এগুলো ভালো কাঠামো পেয়েছে।

প্রশ্ন :

ব্যাংক খাতের জন্য কী থাকতে পারত?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি তো আছেই। কেলেঙ্কারিও আছে। আছে সুশাসনের অভাব। আর্থিক খাতের রক্ত সঞ্চালিত হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। এটাকে হেলা করার সুযোগ নেই। ব্যাংক খাতকে হেলা করলে অর্থনীতির জীবনই বাঁচবে না। আর এটা তো এক-দুই দিনের বিষয় নয়। একেবারে অসুখের মতো। এ খাতে জবাবদিহির যথেষ্ট অভাব আছে। অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে গেল যথাযথ নজরদারির অভাবে। এ জন্য অনেকাংশেই দায়ী অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

অর্থনীতির প্রকৃত খাতগুলো (রিয়েল সেক্টর) কি ঠিক আছে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: কীভাবে ঠিক আছে বলব। এ খাতগুলো তো প্রচণ্ড মাত্রায় নেতিবাচক। ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন—সবই নিম্নগামী। অথচ অসৎদের কোনো সমস্যা নেই, সমস্যা হয়ও না তাদের। সবার জন্য সমান সুযোগের অবস্থা যদি না থাকে, কীভাবে হবে? সমকালীন নানা চ্যালেঞ্জের কথা অর্থমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, কিন্তু মোকাবিলার জন্য কোনো পথ বাতলে দেননি। জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শুধু পর্যবেক্ষণ করে, তা–ও নামকাওয়াস্তে। কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আন্তর্জাতিক বাজারে যে জিনিসের দাম বাড়ে ১০ টাকা, দেশে সেটা বাড়ে ১৫ টাকা। সব সময় এটা হয়।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

এর নেপথ্য কারণ কী বলে মনে করেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: দেশের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পণ্য চলাচলে ১০ থেকে ১২ দফায় চাঁদা দিতে হয়। মোড়ে মোড়ে চাঁদা। এর ফলে দুটি সমস্যা হয়। কৃষক ন্যায্যমূল্য পান না, আবার ভোক্তাকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হয়। টিসিবির মাধ্যমে কিছু কিছু পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এটা ভালো। কিন্তু এটা তো আর দেশব্যাপী কার্যক্রম নয়। গরিব মানুষ কষ্টে আছে। বাজেটে দেখলাম ৫০ লাখ লোককে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। এত দিন ১০ টাকা কেজিতে এ চাল দেওয়া হতো। কিন্তু সরকারি খাদ্যগুদামে যে চাল থাকে, তার প্রায় পুরোটাই চলে যাবে এই ৫০ লাখ লোকের জন্য। আপৎকালের জন্য তাহলে কী ব্যবস্থা থাকল?

প্রশ্ন :

এ বাজেট কি তাহলে ব্যবসাবান্ধব হয়েছে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: বাজেট ব্যবসাবান্ধব হয়েছে, তবে বড় ব্যবসাবান্ধব। একেবারেই ছোট ব্যবসাবান্ধব নয়। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দিকটিও এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে। করপোরেট কর কমানো হয়েছে। তৈরি পোশাকের সঙ্গে রপ্তানি খাতের অন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানের করহারও একই করা হয়েছে। এগুলো ছোট ব্যবসাকে সাহায্য করবে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন :

সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার কী চিত্র দেখতে পাচ্ছেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমি বলব না শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হয়ে যাবে। যদি অবহেলা করা হয়, তাহলে হওয়ার আশঙ্কাও আছে। তবে এক বছরে সবকিছু হবে না। এটা আশাও করি না। একটা পদক্ষেপ তো নেওয়া দরকার। তৈরি পোশাক, সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি—শুধু এগুলোর ওপর ভর করে চললে হবে না। বাজেটের আকার বেড়েছে। ঘাটতিও বেড়েছে। আয়ের উৎসে মনোযোগ কম সরকারের। চলতি অর্থবছরে যদি ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকাও আদায় হয়, আগামী অর্থবছরে আদায় করার কথা বলা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে কি এক লাখ কোটি টাকা বেশি আদায় হবে? এটা বিশ্বাসযোগ্য?

প্রশ্ন :

আয় বৃদ্ধির উপায় কী তাহলে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) যত লোক আছেন, তার অর্ধেকও করের আওতায় নেই। এনবিআর নিজেই কর নিতে যায় না। আসলে কর সংগ্রহের কৌশল নেই সংস্থাটির। তারা বেছে নেয় সহজ রাস্তা। শুনছি, নতুন করদাতা আসবে। অথচ করের দর্শন—যাঁদের সামর্থ্য বেশি, তাঁদের কাছ থেকে বেশি আদায় করা। আর ব্যয় করতে হবে এমনভাবে, যাতে সবাই এর সুবিধাটা পায়। আমাদের এখানে তা হয় না। তার ওপর কর ফাঁকি দেওয়া হয় প্রচুর। কর কম দিয়ে বিনিময়ে টেবিলের নিচ দিয়ে অন্য কিছু দেওয়ার কথাও শোনা যায়।

প্রশ্ন :

এ ব্যাপারে অন্যান্য দেশের চর্চাটা কেমন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: কানাডার কথা যদি বলি। আমি পাঁচ বছর ওই দেশে ছিলাম। ভুলে কখনো যদি কর বেশি চলে যায়, তারা তা ফেরত পাঠাত। আমাদের দেশে এমন ভাবা যায়? আর মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) কথা যদি বলি, সব কি জমা হয়? এনবিআরকে তো এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রশ্ন :

এনবিআর তো কর-ভ্যাটই চায়। তাহলে নতুন উদ্যোগ না নেওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: সংস্থাটির জবাবদিহি কম। কাজ করুন না-করুন, বেতন–ভাতা তো তাঁরা পাচ্ছেনই। এটাই হয়তো কর সংগ্রহের নতুন উদ্ভাবন না হওয়ার কারণ।

প্রশ্ন :

আয়ের কথা তো বললেন, ব্যয়ের দিকটি কি ঠিক আছে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: বহু ব্যয় মূলত অপচয়। কোভিড-১৯ আসার পর স্বাস্থ্য খাতে আমরা যেমন দেখেছি। পরিচালন ব্যয় এবার চার লাখ কোটি টাকা। সুবিধা দেবেন ভালো কথা। কিন্তু তা দিলেই যে ভালো ফল আসবে, তা কিন্তু নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি যদি দেখি, বেসরকারি খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া দরকার ছিল। বেসরকারি খাত তো বহন করতে পারবে না। এ ছাড়া অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আছে। কোনো দরকার নেই এগুলোতে ব্যয় করার। আবার প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর করতে করতে ব্যয় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর জন্যও এ কথা প্রযোজ্য। রাস্তাঘাট তৈরির ক্ষেত্রেও দেখা যায়, ছয় ইঞ্চির বদলে এক ইঞ্চি বিটুমিন দিয়ে টাকা মেরে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা দরকার।

প্রশ্ন :

ব্যাংক খাত নিয়ে একটু কথা বলেছেন। আবার যদি একজন সাবেক গভর্নর হিসেবে আপনার কাছে জানতে চাই, এ খাতে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সমস্যা দেখতে পাচ্ছেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: ব্যাংক খাত এখন সুদ নিয়ে ৯ ও ৬ শতাংশ হারের ফাঁদে আছে। আপনি আমানতের সুদ ৬ শতাংশ করলেন, আবার মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের বেশি। তার মানে আমানতকারীরা কী পেলেন? আবার মূল্যস্ফীতি কমে গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যাংক খাতেও প্রচুর অপচয় হয়। আমার কথা হচ্ছে, ঋণ দিতে হবে যথাযথ জায়গায়। অদক্ষ লোকেরা ঋণ পায় বলেই খেলাপি হন। এ ধরনের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাংকারদের সঙ্গে আঁতাত থাকে। আবার পরিচালকেরাও অন্য ব্যাংকের পরিচালকের সঙ্গে আঁতাত করে ঋণ নেন। এসব ব্যাপারে ব্যাংকের তো বটেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও শক্ত ভূমিকা থাকা চাই।

প্রশ্ন :

ডলার–সংকট নিয়ে কিছু বলবেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: আমি আসছিলাম এ জায়গায়। সাম্প্রতিক সময়ে ডলার কারসাজি করেছে কয়েকটা ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক কী করল? তাদের সতর্ক করল। আমার সময়ে একই ধরনের ঘটনায় একটি ব্যাংকের একটি শাখার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার পথ ছয় মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান পরে এসে অনুরোধ করলেন মাফ করে দিতে।

প্রশ্ন :

ব্যাংক খাতে যদি এত সমস্যাই থাকে, ব্যাংক কমিশন তাহলে গঠিত হচ্ছে না কেন?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: হচ্ছে না কেন, সরকারই ভালো বলতে পারবে। তবে ব্যাংক কমিশন হওয়াটা যে দরকার এবং খুবই দরকার, তা আমি বলতে পারি। ব্যাংক খাতে মাঝেমধ্যে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। দুই ভাই মিলে এক ব্যাংকের এমডিকে গুলি করতে চেয়েছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। ব্যাংক কোম্পানি আইন গোষ্ঠীস্বার্থে কাটাছেঁড়া হয়েছে। এক পরিবারের দুজন আগে ব্যাংকের পরিচালক থাকতে পারতেন। সেটি করা হয়েছে চারজন। তিন বছর করে টানা দুই মেয়াদে এক পরিবারের লোকেরা পরিচালক থাকতে পারতেন। এখন পারেন টানা ৩ মেয়াদে ৯ বছর। বারবার খেলাপি গ্রাহকদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেন উল্টো দিকে আমাদের যাত্রা।

আবার অপরাধীদের বিচার করার ক্ষেত্রেও ধীরগতি দেখা যায়। সোনালী ব্যাংকের সাবেক এমডি হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১২ বছর লেগে গেল। ডেসটিনির এমডির বিচারও হলো প্রায় ১০ বছরে। বিদেশে এ রকম বিচারের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। আমাদের এখানেও এটা কার্যকরভাবে শুরু হতে পারে।

প্রশ্ন :

ব্যাংক খাত আর কত দিন শিল্প খাতে দীর্ঘ মেয়াদের ঋণ দেবে? এ কাজ তো পুঁজিবাজারের। আপনার মত কী?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: দীর্ঘ মেয়াদে অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারকে বেছে নেওয়ার বিকল্প নেই। এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী যদি এমন একটা ঘোষণাও দিতেন, বুঝতাম, সরকারের সদিচ্ছা আছে এ ব্যাপারে। ব্যাংক খাত দেবে মূলত চলতি মূলধন। এটাই বৈশ্বিক চর্চা। আমরা এ থেকে অনেক দূরে আছি। যদিও ঝুঁকি কমানোর জন্য কোনো কোনো বড় প্রকল্পে জোটবদ্ধ ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। একটা বিদ্যুৎ প্রকল্পে এক হাজার বা দুই হাজার কোটি টাকা যদি লাগে বা আরও বেশি লাগে, জনগণের আমানতের টাকায় এ ঋণ দেওয়া কতটুকু বাস্তবসম্মত, তা গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। কারণ, অর্থনীতি বড় হচ্ছে।

প্রশ্ন :

আবার বাজেট প্রসঙ্গে একটু বলুন। ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা তো তিন লাখ টাকার ওপরে উঠছেই না। আপনি এটা কত বৃদ্ধির পক্ষে?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: এটা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা করা উচিত। এনবিআরের যুক্তি হচ্ছে, এতে অনেকে করজালের বাইরে চলে যাবেন। কর আদায়ের নতুন পথ বের করতে না পেরে এনবিআর এমন যুক্তি দিচ্ছে।

প্রশ্ন :

জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বা মূল্যস্ফীতির যে হারের কথা পরিসংখ্যান ব্যুরো বলে থাকে, আপনার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: হিসাবে একটু ঝামেলা আছে বলে মনে হয়। কিছু অতি হিসাব করা হয়। কিছু হিসাব আবার করাও হয় না। সেবা খাত, তৈরি পোশাক, পরিবহন ইত্যাদি হিসাব বেশি করা হয়। মূল্যস্ফীতির হিসাব করার তথ্য সংগ্রহেও ঝামেলা আছে। হয়তো রংপুরের এমন একটা বাজারের তথ্য নেওয়া হয়, যেখানে পণ্যমূল্য কম। বিবিএস যদি কাজটা স্বাধীনভাবে করতে পারত, তাহলে একটা কাজের কাজ হতো।

প্রশ্ন :

দুর্নীতি, অর্থ পাচার?

সালেহউদ্দিন আহমেদ: দুর্নীতি প্রতিরোধের পদক্ষেপ নিয়ে বাজেটে অর্থমন্ত্রী তেমন কিছু বললেন না। অর্থ পাচার নিয়ে বলেছেন, এগুলো ফেরত আনবেন। আমার হতাশা বাড়ে। দুর্নীতিবাজেরা আগে চোরের মতো হাঁটত, এখন তারা বুক ফুলিয়ে হাঁটে। কারণ, তারা এখন ‘স্যার’ বলে সালাম পাচ্ছে। কয়েকটা কঠিন উদাহরণও যদিও তৈরি হতো, দুর্নীতি কমত, পাচারও কমত।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ছোট করে বাজেট নিয়ে যদি শেষ কথা বলতেন...

সালেহউদ্দিন আহমেদ: সমন্বিতভাবে, সমতাভিত্তিক ও কল্যাণকর বাজেট করতে পারলেন না অর্থমন্ত্রী। তাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও এতে পূরণ হবে না।