বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা এখন কঠিন, খরচও বাড়ল

ফাইল ছবি

চাইলেই দেশের যেখানে–সেখানে কেউ আর বাণিজ্য মেলার আয়োজন করতে পারবে না। কারণ, নানা শর্ত আরোপ করে কাজটি কঠিন করে দিয়েছে সরকার। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠেও আর বাণিজ্য মেলা করা যাবে না। পাশাপাশি মেলা আয়োজনের ফি (মাশুল) বাড়ানো হয়েছে। আগে স্থানীয় পর্যায়ের বাণিজ্য মেলা আয়োজনের মাশুল ছিল শুধু পাঁচ হাজার টাকা। আর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেলা আয়োজনের মাশুল ছিল নির্ধারিত ২০০ মার্কিন ডলার। এখন স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষেত্রে মেলার মেয়াদের ভিত্তিতে পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং আন্তর্জাতিকের ক্ষেত্রে ২০০ ডলার থেকে ২ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২৯ জুন এসব কথা বলে ‘মেলা পরিপত্র, ২০২২’ জারি করেছে, যাতে তুলে ধরা হয়েছে দেশের ভেতরে বাণিজ্য মেলা আয়োজনের নানা দিক।

পরিপত্রের অনুলিপি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), সব জেলা প্রশাসক (ডিসি), এফবিসিসিআই এবং দেশের সব ব্যবসায়ী চেম্বারের কাছে পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরিপত্রটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর। এতে বলা হয়েছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ছাড়া দেশের যেকোনো জায়গায় কেউ মেলার আয়োজন করতে চাইলে আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। আর অনুমোদনের জন্য আবেদন করতে হবে কমপক্ষে দুই মাস আগে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পাশাপাশি বাণিজ্য মেলা এবং স্থানীয় বাণিজ্য মেলার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে। বলা হয়েছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও কমপক্ষে তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ থাকলেই তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হিসেবে গণ্য হবে। আর গ্রাম থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশে পণ্য ও সেবা প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা থাকলেই তাকে বলা হবে বাণিজ্য মেলা। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে আয়োজিত মেলাকে বলা হবে স্থানীয় বাণিজ্য মেলা। তবে দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত মেলাকে বাণিজ্য মেলা বলা যাবে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈশাখী মেলা, চৈত্রসংক্রান্তি মেলা, মহররমের মেলা, একুশে বইমেলা ও ঢাকা বইমেলা।

মেলা আয়োজনের মেয়াদ অনুযায়ী মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে পরিপত্রে, যা চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। আন্তর্জাতিক মেলার ক্ষেত্রে এক থেকে পাঁচ দিনের জন্য মাশুল ৩০০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ছয় থেকে ১০ দিনের জন্য দিতে হবে ৫০০ ডলার। একইভাবে ১১-১৫ দিনের জন্য ৭৫০ ডলার, ১৬-২০ দিন ১ হাজার ডলার, ২১-২৫ দিন ১ হাজার ৫০০ ডলার এবং ২৬-৩০ দিনের জন্য ২ হাজার ডলার মাশুল। এভাবে স্থানীয় বাণিজ্য মেলার মাশুল হচ্ছে এক থেকে পাঁচ দিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। আর ৬ থেকে ১০ দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা। স্থানীয় বাণিজ্য মেলার সময় আরও বেশি হলে ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা মাশুল দিতে হবে।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কোভিডের কারণে দেশের ভেতরে এবং বাইরে বাণিজ্য মেলা খুব বেশি হতে পারেনি। নতুন পরিপত্র যেহেতু জারি হয়েছে, এখন আবার মেলা আয়োজনের দিকে সবাই মনোযোগ দেবে। ইপিবি অবশ্য বিদেশে বাংলাদেশের মেলা আয়োজনের সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এর আগেও অনুমতি নিয়ে বাণিজ্য মেলা করতে হতো। তারপরও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগ জানাতে পারেনি দেশে বছরে কতটি বাণিজ্য মেলা হয়।

মেলা আয়োজনের নিয়ম ও শর্ত

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা, স্থানীয় বাণিজ্য মেলা ও বাণিজ্য মেলা—এই তিন ধরনের জন্য আলাদা নিয়ম করা হয়েছে। ডিআইটিএফ ছাড়া দেশের যেকোনো জায়গায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা করতে চাইলে দুই মাস আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে আবেদনকারীর হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর ও ভ্যাট পরিশোধের সনদ, মেলার স্থান বরাদ্দপত্র এবং মাশুল দেওয়ার চালানের কপি।
ইপিবি, চেম্বার অব কমার্স বা স্থানীয় প্রশাসনের মতামত নেওয়ার পর সন্তোষজনক মনে হলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেবে, না হলে জানিয়ে দেবে। জেলা পর্যায়ে মেলা করতে হলে ডিসির অনাপত্তিপত্র লাগবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা ছাড়া স্থানীয় বাণিজ্য মেলার ক্ষেত্রে মাশুল জমা দেওয়ার পর এক মাস আগে আবেদন করতে হবে।

বলা হয়েছে, মেলা আয়োজনের অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সময় বাড়ানো যাবে না। কোনো কারণে মেলা আয়োজন করা সম্ভব না হলে নতুন করে আবেদন করতে হবে এবং মাশুলও দিতে হবে নতুন করে। মেলা আয়োজন করতে গিয়ে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।

এ ছাড়া আমদানি নিষিদ্ধ বা অবৈধ কোনো পণ্য মেলায় বিক্রি করা যাবে না। অশালীন, অসামাজিক ও অবৈধ কার্যক্রম মেলায় পরিচালিত হতে পারবে না। প্রচার করা যাবে না এমন কিছু, যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। প্রশাসনকে অবগত রেখে মেলা পরিচালনা করতে হবে এবং মেলার আয়োজককে নিজ উদ্যোগে মেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে।

পরিপত্রে বলা হয়েছে, দেশীয় পণ্য বা দেশীয় পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত কোম্পানি অথবা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এমন মনে হলে সরকার মেলার অনুমতি বাতিল করে দেবে।

কোনো কারণে মেলা আয়োজন করতে না পারলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন করে মাশুল দিয়ে আবার অনুমতি চাইতে হবে কেন—এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘পরিপত্রের এ শর্তটি নিয়ে আগেও আলোচনা হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্বিপাকের মতো কোনো ঘটনার কারণে মেলা হতে না পারলে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।’