বাড়তি আয় খেয়ে নিচ্ছে মূল্যস্ফীতি

সানেমের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, অতিরিক্ত সময়ের কাজের জন্য পোশাকশ্রমিকের মাসিক আয় বেড়ে ১২-১৩ হাজার টাকা হয়েছে।

মেশিনে কাজ করছেন নারী পোশাকশ্রমিক
ফাইল ছবি

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানাগুলোয় ভালো ক্রয়াদেশ থাকায় পোশাকশ্রমিকদের ওপর কাজের চাপ বেড়েছে। গত মার্চে দুপুরের খাবারের বিরতির বাইরে ওভারটাইমসহ দিনে ১১ ঘণ্টা করে কাজ করেছেন শ্রমিকেরা। বাড়তি ওভারটাইমের জন্য তাঁদের মাসিক আয় বেড়ে ১২-১৩ হাজার টাকা হয়েছে। অবশ্য তার আগেই বেড়েছে বাসাভাড়া ও চালের দাম। ফলে শ্রমিকের বাড়তি উপার্জন খেয়ে ফেলেছে বাড়তি ব্যয়।

করোনায় পোশাকশ্রমিকদের ওপর কী প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) পরিচালিত জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক এক প্রকল্পের অধীনে ধারাবাহিক এই জরিপে সহায়তা করছে বৈশ্বিক অলাভজনক সংস্থা মাইক্রোফাইন্যান্স অথরিটি (এমএফও)। গতকাল বৃহস্পতিবার এক অনলাইন আলোচনায় সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও আশুলিয়া এবং চট্টগ্রামের ১ হাজার ৩০০ পোশাকশ্রমিকের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়েছে। তার মধ্যে ৭৬ শতাংশ নারীশ্রমিক। জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার ও গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ প্রকল্পের ফিল্ড ম্যানেজার ফারাহ মারজান। স্বাগত বক্তব্য দেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

জরিপে উঠে এসেছে, করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর ২০২০ সালের মে ও জুনে পোশাকশ্রমিকেরা দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করতেন। তবে ওই বছর ঈদুল ফিতরের আগে জুলাই মাসে সেটি বেড়ে ১০ ঘণ্টায় পৌঁছায়। তারপর কয়েক মাস কাজ কম হয়। গত বছরের জুনে আবারও বাড়ে। মাঝে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর বাদ দিলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিনে ১০ ঘণ্টা কাজ করেছেন শ্রমিকেরা। তবে গত মার্চে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ ঘণ্টায়। এতে করে বেতন না বাড়লেও অতিরিক্ত ওভারটাইমের কারণে একেকজন শ্রমিকের মাসিক আয় বেড়ে হয় ১২-১৩ হাজার টাকা।

অবশ্য পোশাকশ্রমিকদের আয় বৃদ্ধির আগেই তাদের বাসাভাড়া বেড়েছে। ২০২০ সালে একজন শ্রমিকের বাসাভাড়া ছিল গড়ে ৩ হাজার টাকা। চলতি বছর সেটি বেড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকা হয়েছে। তার মানে দুই বছরের ব্যবধানে বাসাভাড়া বেড়েছে ১৭ শতাংশ। আবার চালের দামও বেড়েছে। শ্রমিকেরা জানান, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৪৮ টাকা কেজিতে চাল কিনেছেন। গত জানুয়ারিতে সেই চাল কিনতে হয়েছে ৫৪ টাকায়। সেই হিসাবে চালের দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।

জরিপের তথ্যানুযায়ী, করোনাকালে ডিজিটাল মাধ্যমে, অর্থাৎ ব্যাংক ও মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (এমএফএস) মাধ্যমে শ্রমিকের বেতন পরিশোধের হার বেড়ে ৭৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। তবে বর্তমানে সেটি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। গত মার্চে ৫৩ শতাংশ শ্রমিক ডিজিটাল মাধ্যমে বেতন পেয়েছেন।

জরিপে অংশ নেওয়া পোশাকশ্রমিকের ৮০ শতাংশই অন্তত এক ডোজ হলেও করোনার টিকা নিয়েছেন। টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকেরা এগিয়ে। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ পুরুষ ও ৭৭ শতাংশ নারী শ্রমিক করোনার টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে দ্বিতীয় ডোজ টিকা কত শতাংশ শ্রমিক নিয়েছেন, সেই তথ্য জানা যায়নি।

করোনায় পোশাকশ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনায় যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও জরিপে উঠে এসেছে। ৫৩ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, তাঁদের সন্তানেরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারেননি। ২৬ শতাংশ শ্রমিক জানান, তাঁদের সন্তানেরা অনলাইনে ক্লাস করলেও সেটি নিয়মিত ছিল না। কেবল ১১ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের ছেলে-মেয়েরা অনলাইনে ক্লাস করতে পেরেছে।

অনুষ্ঠানে সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাকশ্রমিকেরা অতিরিক্ত আয় করলেও তা পর্যাপ্ত নয়।