বিদেশিদের নিরাপত্তায় প্রকল্পে বাড়তি খরচ

বিদেশিদের নিরাপত্তা দিতে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে দেশের অন্যতম অগ্রাধিকার পাওয়া মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্পে বিদেশি পরামর্শক ও প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা দিতে বাড়তি খরচ করা হচ্ছে ৫১ কোটি টাকা। অন্যান্য প্রকল্পেও একইভাবে খরচ বাড়ানো হচ্ছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত জাপানের পরামর্শক ও প্রকৌশলীদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। বেশ কয়েক দিন তাঁরা প্রকল্প এলাকায় যাননি। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে জাপানের কর্মীরা কাজে ফিরে যান। এরপরই বিদেশি প্রকৌশলী-পরামর্শকদের নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি, জনবল, প্রাচীরসহ আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নিতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
এর মধ্যে সবার আগে কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মিতব্য মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫১ কোটি টাকা বাড়তি খরচ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে জাপানের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি টাকা মূল প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত নেই। আপাতত টাকা খরচ করে পরে প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে পুলিশ-আনসার নিয়োগ এবং তাঁদের জন্য দুরবিন, নিরাপত্তাচৌকিতে সৌরশক্তির লাইট স্থাপনসহ কিছু কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
১০ নভেম্বর নিরাপত্তা খাতে বাড়তি খরচের বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বিদ্যুৎ বিভাগের কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। এ প্রকল্পের ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে জাপানের পেন্টা ওশান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমানে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে অর্ধশতাধিক বিদেশি পরামর্শক ও প্রকৌশলী কাজ করছেন। এখন প্রকল্প এলাকায় চ্যানেল ড্রেজিং ও মাটি ভরাটের মতো প্রাথমিক কাজ চলছে। মূল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হলে প্রায় ৪০০ বিদেশি পরামর্শক ও প্রকৌশলী কাজ করতে আসবেন বলে জানা গেছে।
প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনার পর বিদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী জুন মাসের আগেই এ-সংক্রান্ত সব কাজ শেষ হবে। আমরা প্রকল্প এলাকায় এমন নিরাপত্তাব্যবস্থা তৈরি করতে চাই, যা বিদেশিদের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ তিনি জানান, এসব খাতে যত টাকা খরচ করা হচ্ছে, তা অনুমোদনের এখতিয়ার প্রকল্প পরিচালকের আছে। ইতিমধ্যে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড পর্ষদকে বাড়তি খরচের বিষয়টি জানানো হয়েছে। পর্ষদ নীতিগত সম্মতিও দিয়েছে।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম। খরচের খাতগুলো হলো বিদেশিদের থাকার জন্য বহুতল স্টিল ভবন, কাঁটাতারের দেয়াল, টহল সড়ক, অস্ত্রাগার, নিরাপত্তাচৌকি, তদারকিচৌকি, পুলিশ ও আনসারদের বাসস্থান ও আসবাব, হেলিপ্যাড নির্মাণ।
জানা গেছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও আনসারদের অস্থায়ী ক্যাম্প নির্মাণ এবং দুরবিন কেনায় ইতিমধ্যে দুই কোটি টাকার মতো খরচ হয়েছে। পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য ওয়াকিটকি কেনার পাশাপাশি ব্যারাক, হেলিপ্যাড, নিরাপত্তাচৌকি, টহল সড়ক নির্মাণের জন্য ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অন্য কাজের জন্য ঠিকাদারদের দরপত্র মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সরকারি ব্যয় পর্যালোচনা কমিশনের সদস্য জায়েদ বখত প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুলশানের ঘটনার পর প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের নিরাপত্তা দেওয়ার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত। গুলশানের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এভাবে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক হলেও এই মুহূর্তে আমাদের সামনে অন্য কোনো বিকল্প নেই।’ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক এই গবেষণা পরিচালকের মতে, এখন সময়টি বেশ জটিল। বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিরাপত্তা খাতে বাড়তি খরচ করে হলেও মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।
২০১৪ সালে এ প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা।