বিধিনিষেধ উঠে গেলেই কারখানায় পরিদর্শন শুরু

সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ উঠে গেলে সারা দেশে শিল্পকারখানায় পরিদর্শন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি। কারখানায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র আছে কি না, থাকলে সেটি কার্যকর কি না, অবকাঠামো ঠিক আছে কি না, অন্যান্য দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, কমিটি এসব বিষয় দেখবে। সরেজমিন প্রতিবেদন সরকার ঘোষিত ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটির কাছে হস্তান্তর করবে। অবশ্য পোশাক কারখানা এই পরিদর্শনের বাইরে থাকবে।

১৯ জুলাই সোমবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।

পোশাক কারখানার বাইরে অন্য কলকারখানায় সংস্কার কার্যক্রমে তোড়জোড় শুরু হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুডস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের পর। ওই দুর্ঘটনায় ৫২ শ্রমিক মারা যান। আহত হন অনেকে। সেই দুর্ঘটনার পর দেশের সব শিল্পকারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে।

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আলাদা এক নির্দেশে বিডার নেতৃত্বে সরকারি–বেসরকারি সংস্থাগুলোকে সঙ্গে নিয়ে কারখানা পরিদর্শনের কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশের পর ওই দিন ৩৫টি সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে বসে বিডা।
বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিডার একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কারখানা কীভাবে পরিদর্শন হবে, কমিটি সে জন্য একটি কর্মপদ্ধতি ঠিক করবে। কমিটি ৫ আগস্টের আগে তাদের প্রতিবেদন দেবে। ৫ আগস্ট পর্যন্ত সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলবে। যদি ওই দিন বিধিনিষেধ উঠে যায়, আমরা পরদিন থেকে কারখানা পরিদর্শনে যাব। আর বিধিনিষেধ যদি বাড়ানো হয়, তাহলে আমাদের পরিদর্শনও পিছিয়ে যাবে৷ কারণ, বিধিনিষেধে তো কারখানাও বন্ধ থাকবে।’ তিনি বলেন, কারখানা পরিদর্শনের আগে একটা কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে। কীভাবে কারখানা পরিদর্শন করা হবে, তার একটা পথনকশা থাকবে সেখানে।

বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ২০ সদস্যের। এখানে সরকার ও বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি রয়েছে। এই কমিটির কাজ হবে, পোশাক কারখানার বাইরে অন্য শিল্পকারখানার সংখ্যা কত, তা বের করা। কতটা খাত আছে, তা বের করা। এ ছাড়া কারখানা পরিদর্শন কীভাবে হবে, তার একটি কর্মপদ্ধতি ঠিক করা। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার আগেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে ২৪ সদস্যের জাতীয় কমিটির কাছে।

সভায় আলোচনা হয়, গত এক দশকে বিভিন্ন খাতে ছোট–বড় অসংখ্য শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জ ও পুরান ঢাকা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এসব কারখানায় কর্মপরিবেশ নেই। এটা সবাই জানেন। তাই এসব কারখানাকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে এফবিসিসিআই ও বেসরকারি সংস্থা থেকে অনুরোধ জানানো হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, কমিটি যখন কারখানা পরিদর্শনে যাবে, তখন এলাকাভিত্তিক যাওয়া হবে। এক এলাকায় বিভিন্ন ধরনের কারখানা থাকে। তাই সব কারখানা একসঙ্গে পরিদর্শন করা হবে। একটা কারখানায় কী কী সমস্যা আছে, কমিটি সেসব তুলে ধরবে। অভিজিৎ চৌধুরীর নেতৃত্বে এই কমিটি ২০ সদস্যের।

এর আগে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ভবন ধসের পর পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বিদেশি ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্স গঠন করা হয়েছিল। সেখান থেকে পোশাক খাতে ব্যাপক সংস্কার এসেছিল। এবার পোশাক কারখানার বাইরে অন্য শিল্পকারখানায় এমন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।