বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমবে

রিজওয়ান রাহমান

বর্তমানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নতুন অর্থবছরে অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। তার মধ্যে বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। এটিকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে গত সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমানোর কথা বলেছেন গভর্নর। অথচ সরকার ব্যাংক খাত থেকে আরও অনেক বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য আগেই নির্ধারণ করেছে। আমি মনে করি, মুদ্রানীতিতে ঋণপ্রবাহ কমানোর যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আরও কমে যাবে। আর মূল্যস্ফীতির হার ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গেলে তা সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশকেই ব্যাহত করবে। তাতে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও হ্রাস করবে।

ডলার সংকট মোকাবিলা করা এখন আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাস্তবতা হলো, ডলারের বাড়তি দাম আর হয়তো কমবে না। সুতরাং এখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হারের অস্থিরতা শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে। তবে কীভাবে সেটি হবে, স্পষ্ট করেনি তারা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করতে আমদানিনির্ভরতা কমানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক। ঝামেলাহীন আমদানি ও বৈদেশিক রিজার্ভের উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একাধিক মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। বারবার ডলারের বিপরীতে টাকার পতনের ঘটনা রপ্তানির জন্য লাভবান হবে না। এতে বিনিয়োগ সংকুচিত হবে।

সদ্য পাস হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট জনবান্ধবের চেয়ে বেশি ব্যবসাবান্ধব হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি আগের চেয়ে বেড়েছে। সে জন্য এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ঘাটতি মেটাতে সরকারের ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির এমন পদক্ষেপ ইতিবাচক হবে না। এমনিতেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা সামলে ব্যবসা-বাণিজ্য ধীরগতিতে হচ্ছে। তাই বিনিয়োগও কম হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি চলতি অর্থবছরে অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। বাজেটে ৪০টি সেবার ক্ষেত্রে কোম্পানির রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাতে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে তা জিডিপির ৬ শতাংশ হওয়া উচিত। রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর কমানোর কারণে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে তৈরি পোশাক খাতের মতো অন্যান্য রপ্তানি পণ্যেও একই ধরনের সুবিধা দেওয়া দরকার। তবে করপোরেট কর কমানোর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে, তা অধিকাংশ কোম্পানি পূরণ করতে পারবে না।

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। বর্তমান আর্থিক স্থিতিশীল অবস্থা মোকাবিলায় যথাযথ সতর্কতা বজায় রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ।